পহেলগাঁও হামলার পর পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। এই হামলার পর থেকেই দেশজুড়ে উদ্বেগ এবং রাজনৈতিক স্তরে তৎপরতা বেড়েছে। এই প্রেক্ষিতেই সোমবার দেশের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রির সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাসক এবং বিরোধী, দুই পক্ষেরই প্রতিনিধি। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের নেতৃত্বে এই বৈঠকের আয়োজন হয়।
এই বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে। বিশেষ করে, তৃণমূল কংগ্রেসের ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) একাধিক তীক্ষ্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেন, যা বৈঠকের উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। অভিষেকের মূল প্রশ্ন ছিল, “পহেলগাঁওয়ে চার জঙ্গি কীভাবে প্রবেশ করল? তাদের কি নিকেশ করা গেছে? যদি না যায়, তাহলে তারা এখন কোথায় আছে? সরকারের কাছে কি কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে, না কি তারা ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে?”
এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি জানান, “অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং সুরক্ষা বলয় শক্তিশালী করা হয়। কিছু তথ্য গোপনীয়তার কারণে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তবে তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।” যদিও অভিষেকের প্রশ্ন ছিল স্পষ্ট এবং জনসাধারণের মনেও যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর বক্তব্যে।
পহেলগাঁও হামলায় সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা দেশজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হওয়াটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অভিষেকের প্রশ্নে বোঝা যায়, সরকারের কাছে শুধু কৃতিত্ব দাবি করলেই চলবে না, সঠিক ও স্বচ্ছ তথ্য জানানোও জরুরি।
এই বৈঠকে বিদেশসচিব আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির একটি অস্থায়ী পথ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু জঙ্গি অনুপ্রবেশ এবং সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণের মতো ঘটনা এই শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে রাজনীতি নয়, বাস্তব তথ্য ও কার্যকর পদক্ষেপই কাম্য। পহেলগাঁও হামলায় জড়িত জঙ্গিরা যদি পালিয়ে গিয়ে থাকে, তবে সেটা দেশের গোয়েন্দা ও সুরক্ষা ব্যবস্থার উপর বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তোলে।
এই ঘটনায় আর একবার মনে করিয়ে দিল, কেবল সীমান্তে অস্ত্রের মোকাবিলা নয়, গোয়েন্দা তৎপরতা, তথ্য বিশ্লেষণ, কূটনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক স্তরে সমর্থন গড়ে তোলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকে তৃণমূল সাংসদের এই ধরনের প্রশ্ন নিঃসন্দেহে দেশের স্বার্থে এক সাহসী পদক্ষেপ। সরকারকে শুধু সাফল্যের গল্প শোনালেই চলবে না, ব্যর্থতার দায়ও নিতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন করতেই হবে।
দেশের নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষার বিষয়ে এমন জবাবদিহিতা গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় এবং তা ভবিষ্যতের পথনির্দেশক হিসেবেও কাজ করবে।