আয়ুর্বেদ থেকে স্টেরয়েড! বাংলাদেশকে শায়েস্তা করার নানা টোটকা সুকান্তর

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হল রাজনৈতিক মঞ্চ। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar ) এদিন এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে জানালেন,…

Sukanta Majumdar

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হল রাজনৈতিক মঞ্চ। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar ) এদিন এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে জানালেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ভারতের পছন্দ নয়, আর সেই কারণে প্রয়োজনে ‘স্টেরয়েড’ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার সোমবার বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তন আমাদের পছন্দ নয়। তাই ভারত পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। যদি হোমিওপ্যাথি কাজ না করে, তাহলে আয়ুর্বেদ, তাতেও না হলে অ্যালোপ্যাথি, শেষে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েডও ব্যবহার করতে হতে পারে। তবে চিকিৎসা হবে, এটা নিশ্চিত।”

   

এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান কি ক্রমেই কঠোর হচ্ছে? বিশেষ করে যখন ভারত সরকার একাধিক স্থলবন্দর, বিশেষত হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বন্ধ করেছে। হিলি সীমান্ত, যেটি সুকান্ত মজুমদারের সংসদীয় এলাকা, সেখানে এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে।

গত এক বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন নয়। বাংলাদেশের শাসক দলের একাধিক নেতা ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। সীমান্ত নিয়ে হুমকি, উত্তর-পূর্ব ভারতের দখলের স্বপ্ন এবং চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বে ঘনিষ্ঠতা—এই সমস্ত বিষয় ভারতের কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত যে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, তা স্পষ্ট করছেন সুকান্ত।

তাঁর এই “চিকিৎসা তত্ত্ব” অবশ্য নিছক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোচনার বাইরে স্পষ্ট বার্তা বহন করছে। সূত্রের খবর, বাংলাদেশে ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের উত্থান, র‍্যাডিকাল রাজনৈতিক বক্তব্য এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি—এই সব বিষয় নিয়ে দিল্লি উদ্বিগ্ন।

বিজেপি নেতৃত্বের মতে, বাংলাদেশ যদি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলায়, তবে ভারতের পক্ষ থেকেও নরম বার্তা পাঠানো সম্ভব নয়। সুকান্ত মজুমদার মূলত সেই কূটনৈতিক অবস্থানেরই প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন তাঁর ভাষণে।

Advertisements

তিনি বলেন, “আমরা একাধিক স্তরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু যদি কেউ আমাদের নিরাপত্তা এবং স্বার্থে আঘাত করে, তাহলে ভারত নিজের পথ নিজেই ঠিক করে নেয়। এটাই মোদি সরকারের নীতি।”

অপরদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, আগামী বছরের বাংলাদেশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লির এই বার্তা আসলে চাপ সৃষ্টি করার কৌশল। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বাংলাদেশের প্রভাব রুখতেও এটি বিজেপির রাজনৈতিক প্যাকেজ।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য সুকান্তর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “এই ধরনের শব্দচয়ন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত এবং অশালীন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়, ডাক্তারি ওষুধের মতো হুমকি দিয়ে নয়।”

তবে বিজেপি শিবিরে এই বক্তব্যকে একেবারে পরিকল্পিত এবং কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্য এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত দিল্লি—সেটাই যেন প্রমাণ করতে চায় এই “আয়ুর্বেদ থেকে স্টেরয়েড” কৌশল।