একদিকে যখন ভারত “অপারেশন সিঁদুর” সফলভাবে সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের প্রতিরক্ষা কৌশল ও কূটনৈতিক সক্ষমতা তুলে ধরার উদ্যোগ নিচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে তৃণমূল কংগ্রেসের বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের (Yusuf Pathan) নাম অন্তর্ভুক্ত করাকে ঘিরে দলের অস্বস্তি প্রকাশ্যে এসেছে।
সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা এবং বর্তমান বিজেপি মুখপাত্র গৌরব বল্লভ। এক সময়ে টেলিভিশন বিতর্কে কংগ্রেসের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি রাজনৈতিক মহলে চমক দেন। এবার মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে।
দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গৌরব বল্লভ বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে এত আপত্তি কেন? তিনি কি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ নন? যদি না হন, তাহলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করুন। তিনি তো আপনার দলের নির্বাচিত সাংসদ। তাহলে এই বিদ্বেষ কেন?”
তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউসুফ পাঠানকে ঘৃণা করেন। একইভাবে কংগ্রেস শশী থারুরকে সহ্য করতে পারে না। তাহলে এদের দলে রাখা হচ্ছে কেন? আজ দেশ আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে। আর সেখানে এই রাজনৈতিক বিদ্বেষ কিসের?”
উল্লেখযোগ্য, “অপারেশন সিঁদুর”-এর সাফল্যকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে কেন্দ্র সরকার ৩৩টি দেশে ৫৯ জন সর্বদলীয় প্রতিনিধিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই প্রতিনিধি দলের তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান এবং কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। কিন্তু কেন্দ্রের তৈরি সেই তালিকা নিয়েই আপত্তি তুলেছে তৃণমূল এবং কংগ্রেস—এই দুই প্রধান বিরোধী দল।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউসুফ পাঠানকে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দলে রাখার বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অখুশি। একইভাবে কংগ্রেসের তরফেও শশী থারুরের নির্বাচনের বিরোধিতা করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। এই পরিস্থিতিতেই গৌরব বল্লভের বিস্ফোরক মন্তব্য রাজনৈতিক বিতর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউসুফ পাঠান মূলত একজন প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় স্তরে পরিচিত মুখ। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে বহরমপুর থেকে প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। অপরদিকে, শশী থারুর কংগ্রেসের অন্যতম অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সাংসদ। তাঁদের মতো মুখদের আন্তর্জাতিক সফরের দলে রাখা যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করছে অনেক মহল। অথচ দলের অন্দরে তাঁদের বিরুদ্ধেই আপত্তির সুর স্পষ্ট।
এ নিয়ে তৃণমূল বা কংগ্রেসের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও, গৌরব বল্লভের মন্তব্য যে নতুন করে তৃণমূলের অন্দরের মতানৈক্য এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে সামনে এনে দিয়েছে, তা স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক মহলে এক নতুন প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে—দলের মুখপাত্ররা কি আদৌ তাদের সাংসদদের পাশে দাঁড়াতে পারছেন, নাকি ব্যক্তিগত বিদ্বেষেই হারিয়ে যাচ্ছে দলের মূল লক্ষ্য? এই ঘটনার পর ইউসুফ পাঠানের অবস্থান আরও দুর্বল হবে তৃণমূলে?