কামারহাটি অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো এক সময়ের মাফিয়া জয়ন্ত সিংয়ের (Jayanta Singh) অবৈধ প্রাসাদোপম বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের কড়া পর্যবেক্ষণে, আড়িয়াদহের ১, প্রতাপরুদ্র লেন, কলকাতা-৫৭ নম্বর এলাকায় থাকা এই চারতলা বাড়ি (G+3) বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে সেখানে একটি খেলার মাঠ গড়ে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন বিচারপতি। তিনি আরও বলেছেন, “বাড়ি ভেঙে খেলার মাঠ করুন এবং সেই রিপোর্ট পুরসভার অফিসারেরা আদালতে পেশ করুন।” এহেন মন্তব্য স্পষ্ট করে দিচ্ছে আদালতের কঠোর মনোভাব।
বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত প্রশ্ন তোলেন, “যখন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল, তখন কামারহাটি পুরসভার অফিসারেরা কী করছিলেন? বাড়ির মালিককে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে পুরসভা। তাহলে সেই সময়ে বেআইনি নির্মাণ কিভাবে হল? এই নির্মাণ রাতারাতি হয় না। পুরসভার অফিসাররা কী চুপচাপ বসে ছিলেন?” তিনি সাফ জানান, শেষ পাঁচ বছরে কামারহাটি পুরসভার সমস্ত অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত বছর কামারহাটিতে এক মারধরের ঘটনায় প্রকাশ্যে আসে জয়ন্ত সিংয়ের নাম। এরপর একে একে উঠে আসে তার বেআইনি কার্যকলাপের ফিরিস্তি। জানা যায়, আড়িয়াদহের মৌসুমী মোড়ের কাছে একটি সরকারি জমি দখল করে ও পুকুরের একাংশ ভরাট করে বিশাল আকারের চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেছে জয়ন্ত। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই বাড়িটি শুধু আকারে বড় নয়, ভয় আর দখলের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠলেও দীর্ঘদিন ধরে কার্যত নীরব ছিল পুরসভা ও প্রশাসন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জয়ন্ত সিংয়ের প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। প্রশাসনের একাংশেরও তার সঙ্গে যোগসাজশ ছিল বলেও অভিযোগ।
গত বছর জয়ন্ত সিংকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং বর্তমানে সে জেল হেফাজতে রয়েছে। তবু তার গড়ে তোলা প্রভাব এবং নির্মাণ এখনো এলাকাবাসীর জন্য আতঙ্কের প্রতীক।
হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মতে, এই রায় শুধু একটিমাত্র অবৈধ বাড়ি ভাঙার নির্দেশ নয়, বরং গোটা কামারহাটিতে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি বার্তা। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবার আদালত সরাসরি হস্তক্ষেপ করায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন এলাকার মানুষ।
এখন দেখার বিষয়, পুরসভা আদালতের নির্দেশ কত দ্রুত এবং কতটা কার্যকরভাবে পালন করে। সেইসঙ্গে, কামারহাটি পুরসভার অফিসারদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত কতদূর গড়ায়, সেটাও নজরে রাখছে সাধারণ মানুষ ও রাজ্য প্রশাসন।
এই রায়ের মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্ট ফের একবার দেখিয়ে দিল বেআইনি নির্মাণ এবং প্রশাসনিক গাফিলতির বিরুদ্ধে আইনের চোখ বন্ধ নেই। প্রশ্ন একটাই—এই রায় শুধু জয়ন্ত সিংয়ের বাড়ি পর্যন্তই সীমিত থাকবে, না কি শুরু হবে কামারহাটির অন্যান্য বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ?