ভোডাফোন-এয়ারটেলের AGR মামলায় ধাক্কা, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন খারিজ

Vodafone AGR case: ভারতীয় টেলিকম খাতে চলমান বিতর্কিত এজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ফের একবার কঠোর অবস্থান নিল। সোমবার (১৯ মে) সুপ্রিম…

Supreme Court Rejects Vodafone-Idea & Airtel AGR Relief Plea

Vodafone AGR case: ভারতীয় টেলিকম খাতে চলমান বিতর্কিত এজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ফের একবার কঠোর অবস্থান নিল। সোমবার (১৯ মে) সুপ্রিম কোর্ট ভোডাফোন আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেল-এর দায়ের করা রিট পিটিশন খারিজ করে দেয়। এই পিটিশনে তারা সুদ ও জরিমানা মওকুফের আর্জি জানিয়েছিল। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং আর মহাদেবন-এর বেঞ্চ এই আবেদনকে “শকিং” ও “মিসকনসিভড” বলে অভিহিত করে।

ভোডাফোন আইডিয়া চলতি মাসের শুরুতেই প্রায় ₹৪৫,০০০ কোটির এজিআর সংক্রান্ত বকেয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পুনরায় আবেদন করে। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও আদালত ভোডাফোন আইডিয়াকে কোনো রকম ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

   

সরকারের আর্থিক সহায়তা সত্ত্বেও বিপাকে ভোডাফোন আইডিয়া
সরকার ভোডাফোন আইডিয়ার ₹৩৯,০০০ কোটি মূল্যের ঋণকে ইকুইটিতে রূপান্তর করলেও সংস্থাটির উপর এখনও ₹১.১৯ লক্ষ কোটি টাকার বেশি স্পেকট্রাম এবং এজিআর সংক্রান্ত বকেয়া রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই এই সংস্থাটি আর্থিক সংকটে জর্জরিত এবং টেলিকম খাতের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই সাম্প্রতিক রায় ভোডাফোন আইডিয়ার ভবিষ্যতের উপর বড় ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

ভারতী এয়ারটেল ও হেক্সাকমের আবেদনও খারিজ
শুধু ভোডাফোন আইডিয়া নয়, ভারতী এয়ারটেল ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতী হেক্সাকমও সুপ্রিম কোর্টে এজিআর সুদ ও জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করে। তাদের প্রায় ₹৩৪,৭৪৫ কোটির দাবিকে ইকুইটির ভিত্তিতে ছাড় দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। তবে আদালত তা বিবেচনা করতে অস্বীকৃতি জানায়।

সুপ্রিম কোর্টের আগে ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমও জানিয়েছিল ‘না’
ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকম (ডট) আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, আদালতের ২০২০ সালের নির্দেশনার পর তারা এজিআর সংক্রান্ত কোনো অতিরিক্ত ছাড় দিতে পারবে না। সরকার ইতিমধ্যেই ভোডাফোন আইডিয়ার ইকুইটি রূপান্তরের মাধ্যমে সহায়তা করেছে বলেও জানানো হয়েছিল।

২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট এজিআরের সংজ্ঞা ও হিসাব নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তি করে দেয় এবং ২০২০ সালে একটি রায়ে জানায়, সমস্ত টেলিকম কোম্পানিকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে কিস্তিতে বকেয়া মেটাতে হবে।

ডট-এর তরফ থেকে আদালতে সময়সীমা ২০ বছরে বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হলেও, শীর্ষ আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি, এজিআর গণনার পদ্ধতিতে অঙ্কগত ভুল রয়েছে বলে যেসব যুক্তি টেলিকম কোম্পানিগুলি তুলে ধরেছিল, সেগুলিও নাকচ করে দেয় আদালত।

Advertisements

ভোডাফোন আইডিয়ার ‘কিউরেটিভ পিটিশন’ও খারিজ
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভোডাফোন আইডিয়া আদালতের কাছে একটি কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করেছিল এজিআর সংক্রান্ত দাবির অঙ্ক পুনর্বিবেচনার জন্য। সেই আবেদনও সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয়।

এপ্রিল মাসে সংস্থাটি ফের একবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়, এজিআর-সংক্রান্ত সুদের দাবির ছাড় চেয়ে। কিন্তু সোমবার আদালত সেই আবেদন ‘শকিং’ বলে অভিহিত করে এবং জানিয়ে দেয়, এমন আবেদন আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার মতন এবং এর কোনো ভিত্তি নেই।
শেয়ারে পতন

এই রায় প্রকাশ্যে আসার পর সোমবার ভোডাফোন আইডিয়ার শেয়ারের দাম তীব্র পতনের সম্মুখীন হয়। একসময় সংস্থাটির শেয়ার ৯ শতাংশের বেশি পতন ঘটিয়ে ₹৬.৭০-তে লেনদেন করছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভোডাফোন আইডিয়া-সহ অন্যান্য টেলিকম সংস্থার উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসায়িক কৌশলে বড়সড় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের টেলিকম খাতে এজিআর সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিতর্ক অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের একের পর এক রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল। আদালত বারংবার জানিয়ে দিয়েছে, এই বকেয়া পরিশোধে কোনো রকম ছাড় বা সময় বাড়ানো হবে না। ফলে কোম্পানিগুলিকে এখন আর্থিক পরিকল্পনা নতুন করে সাজিয়ে সরকার নির্ধারিত শর্তেই ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হতে হবে।

এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট আর কোনো টেলিকম কোম্পানিকেই এজিআর মামলায় অতিরিক্ত সহানুভূতির চোখে দেখবে না, বরং আইনানুগ সিদ্ধান্তের পথে চলেই এই বিতর্কে পরিসমাপ্তি টানবে।