স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) অর্থনৈতিক বছর ২০২৪-২৫-এ রেকর্ড ৯.২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭৬,০০০ কোটি টাকা) নিট লাভ করে নজির গড়ল। এই অর্জনের মাধ্যমে SBI হয়ে উঠল ভারতের তৃতীয় সংস্থা – রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ONGC-র পর – যারা বৈশ্বিক নিট লাভের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০০ কোম্পানির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
ভারতের ফিলিপ কোটলার হিসেবে পরিচিত রাজেন্দ্র শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এই বিপুল মুনাফার মূল চালিকাশক্তি SBI-র ডিজিটাল রূপান্তরের সাফল্য, বিশেষ করে YONO অ্যাপ। তাঁর কথায়, “SBI-র লাভের গল্প আসলে YONO-র গল্প।”
২০১৭ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া YONO (You Only Need One) অ্যাপ এখন SBI-র বৃদ্ধির মেরুদণ্ড। বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মে ৭৪ মিলিয়নেরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে, যারা দেশের যেকোনো প্রাইভেট ব্যাঙ্ক বা ফিনটেক সংস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। প্ল্যাটফর্মটি ইতিমধ্যে ৩.২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ বিতরণে সাহায্য করেছে এবং SBI-র রিটেল লোন বুকের একটি বড় অংশে অবদান রাখছে।
প্রতিদিন ১ কোটিরও বেশি লগইন হয় YONO-তে। SBI-র সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট লেনদেনের ৬৫ শতাংশ এখন এই অ্যাপের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো, SBI-র মোট ৫০০ মিলিয়ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ (প্রায় ৭৪ মিলিয়ন) YONO ব্যবহারকারী, আর সেই অংশ থেকেই অধিকাংশ মুনাফা আসছে। বাকি ৩৭০ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট মূলত নিম্ন-মার্জিন, উচ্চ ব্যয়বহুল পরিষেবা সেগমেন্ট হিসেবে ব্যাঙ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
প্রশ্ন উঠছে, ২০,০০০ শাখা এবং ২.২ লক্ষ কর্মচারীর এক বিশাল পরিকাঠামো দিয়ে কি আর ২০২৫ সালে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্ভব? আধার, UPI, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ভিত্তিক ভারতীয় ডিজিটাল অবকাঠামো এখন গ্রামেও স্মার্ট ব্যাংকিং সম্ভব করে তুলেছে।
অথচ, এমন রেকর্ড লাভ সত্ত্বেও SBI এখনও P/B রেশিওতে মাত্র ১.৪-তে ট্রেড করছে, যেখানে HDFC Bank (২.৮) এবং ICICI Bank (৩.৩)-এর বাজার মূল্যায়ন অনেক বেশি। বিনিয়োগকারীদের মতে, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি অনেক বেশি চটপটে, প্রযুক্তিনির্ভর এবং দক্ষ।
রাজেন্দ্র শ্রীবাস্তব মনে করেন, SBI-র উচিত YONO-কে ব্যাঙ্কের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। কম খরচে আরও বেশি গ্রাহককে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা, কম-রিটার্ন শাখাগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ করা, এবং YONO-র মাধ্যমে বিক্রয় বাড়িয়ে গ্রাহকের আজীবন মূল্য বাড়ানো SBI-র ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল ফার্স্ট ব্যাঙ্কিং এখন আর বিলাসিতা নয়, সময়ের দাবি। SBI-র রয়েছে আস্থা, আকার এবং নিয়মনীতি অনুগত হওয়ার সুবিধা – যা তাকে শুধু প্রতিযোগিতামূলক নয়, জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে পথপ্রদর্শক করে তুলতে পারে।”
সবশেষে, তিনি বলেন, “SBI যদি YONO ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পারে, তাহলে বাজার মূলধনও দ্বিগুণ হতে পারে শাখা বা কর্মীর সংখ্যা না বাড়িয়েই। এটি শুধু SBI-কে নয়, বরং অন্যান্য সরকারী সংস্থাগুলোকেও দেখাতে পারে— লাভ, দক্ষতা এবং অন্তর্ভুক্তি একসঙ্গে সম্ভব।”