জাতীয় তদন্ত সংস্থা (nia) মণিপুরের তেংনোপাল জেলার মোরেহ এলাকায় ২০২৪ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন (আইআরবি) পোস্টে হামলার সঙ্গে জড়িত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এই হামলায় একজন পুলিশ কর্মী নিহত এবং দুজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি হলেন তেংনোপালের বাসিন্দা থাংমিনলার মেট ওরফে লেনিন মেট। তাকে রবিবার আসামের শিলচর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনআইএ (nia) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মেটের কোনও উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক এখনও স্পষ্ট নয়।”
এই হামলা গত বছর ১৭ জানুয়ারি সংঘটিত হয়েছিল। হামলাকারীরা মোরেহের আইআরবি পোস্টে আক্রমণ চালায়, যার ফলে মণিপুর পুলিশের কনস্টেবল ডব্লিউ সোমোর্জিত সিং নিহত হন এবং আরও দুজন পুলিশ কর্মী, টি শৈলেশ্বর সিং এবং একজন অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ, গুরুতর আহত হন।
এই ঘটনা মণিপুরে চলমান জাতিগত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য, যেখানে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে ২৬০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
শিলচরের একটি আদালত এনআইএ-কে অভিযুক্ত থাংমিনলার মেটের ট্রানজিট রিমান্ড হেফাজতের অনুমতি দিয়েছে। এই মামলায় (আরসি-০৫/২০২৪/এনআইএ/আইএমপি) তিনিই প্রথম গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি। তাকে গুয়াহাটিতে এনআইএ-এর বিশেষ আদালতে হাজির করা হবে। এনআইএ (nia)জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলছে, এবং মেটের ভূমিকা ও সম্ভাব্য সহযোগীদের সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হামলার পটভূমি (nia)
১৭ জানুয়ারি ২০২৪-এ মোরেহে আইআরবি (nia)পোস্টে হামলাটি ছিল মণিপুরে চলমান জাতিগত উত্তেজনার একটি অংশ। মোরেহ, যা ভারত-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র, কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
এই হামলায় সন্দেহভাজন উগ্রপন্থীরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে পুলিশ পোস্টে আক্রমণ চালায়। নিহত কনস্টেবল সোমোর্জিত সিং মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন, যা এই ঘটনাকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে।
মণিপুরে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘাতে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা দেখা গেছে। এই সংঘাতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মোরেহে আইআরবি পোস্টে হামলা এই সংঘাতের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি
এনআইএ-এর তদন্তে থাংমিনলার মেটকে এই হামলার একজন মূল সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, তিনি কোনও নির্দিষ্ট উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তদন্তকারীরা তার সম্ভাব্য সহযোগী এবং হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এনআইএ-এর (nia)একটি সূত্র জানিয়েছে, মেটের গ্রেফতার তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, এবং এটি হামলার পেছনের নেটওয়ার্ক উদঘাটনে সহায়তা করতে পারে।
শিলচরে মেটের গ্রেফতারের বিষয়টি এক্স-এ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়, “এনআইএ (nia)মোরেহে আইআরবি পোস্টে হামলার জন্য দায়ী একজন কুকি উগ্রপন্থীকে গ্রেপ্তার করেছে।” তবে, এনআইএ স্পষ্ট করেছে যে মেটের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক এখনও তদন্তাধীন। এই ধরনের পোস্টগুলো মণিপুরের সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে জাতিগত উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই তথ্যের যাচাই-বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইনি প্রক্রিয়া
শিলচরের আদালত মেটকে এনআইএ-এর (nia)ট্রানজিট রিমান্ড হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাকে গুয়াহাটির এনআইএ-এর বিশেষ আদালতে হাজির করা হবে, যেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন এবং তদন্তের পরবর্তী ধাপ নির্ধারিত হবে। এনআইএ মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে, কারণ এটি মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
মেটের গ্রেপ্তারের খবর স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। লোকমত টাইমস জানিয়েছে, “থাংমিনলার মেট ওরফে লেনিন মেটকে শিলচরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এই মামলার প্রথম অভিযুক্ত।” এই গ্রেপ্তারকে মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র, যা কেবল পাকিস্তানকেই নয়, তুরস্ক-আজারবাইজানকেও আঘাত করবে
মণিপুরের পরিস্থিতি
মণিপুরে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘাত রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। মোরেহে আইআরবি পোস্টে হামলা এই সংঘাতের একটি প্রতিফলন, যেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এই হামলার পর মণিপুর সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এনআইএ-এর তদন্ত এই ধরনের হামলার পেছনের মূল কারণ এবং সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
স্থানীয়রা এই গ্রেফতার কে স্বাগত জানালেও, অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এটি জাতিগত উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। একটি এক্স পোস্টে বলা হয়, “মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় ২৬০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সোমোর্জিত সিংয়ের জন্য ন্যায়বিচার দরকার।” এই ধরনের মন্তব্য মণিপুরের জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিশীলতাকে প্রতিফলিত করে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এনআইএ এখন মেটের সহযোগীদের চিহ্নিত করতে এবং হামলার পরিকল্পনার পেছনের নেটওয়ার্ক উদঘাটনের জন্য তদন্ত ত্বরান্বিত করবে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মেটের ফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, যা হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। এছাড়াও, এনআইএ মোরেহ এলাকায় সক্রিয় সম্ভাব্য উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর উপর নজর রাখছে।
থাংমিনলার মেটের গ্রেফতার মণিপুরের মোরেহে আইআরবি পোস্টে হামলার তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ঘটনা মণিপুরে চলমান জাতিগত সংঘাত এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন। এনআইএ-এর তদন্ত এই হামলার পেছনের নেটওয়ার্ক উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, মণিপুরের সংবেদনশীল পরিস্থিতি বিবেচনায়, তদন্তের সময় জাতিগত উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।