UCO Bank Loan Fraud: ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুবোধ কুমার গোয়েলকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। শুক্রবার, ১৬ মে, দিল্লির বাসভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, তিনি ইউকো ব্যাঙ্কে নিজের দায়িত্বকালীন সময়ে কনকাস্ট স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড (CSPL)-কে বিপুল পরিমাণে ঋণ অনুমোদন করেন এবং তার বিনিময়ে বেআইনি লাভ গ্রহণ করেন।
এই মামলার সূত্রপাত কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI)-র এক এফআইআর থেকে, যেখানে ৬,২১০.৭২ কোটি টাকার ঋণের অপব্যবহার এবং তছরুপের অভিযোগ ওঠে। এরপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তদন্ত শুরু করে এবং এপ্রিল মাসে গোয়েল সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালায়।
১৭ মে, গোয়েলকে কলকাতার বিশেষ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আদালতে (PMLA কোর্ট) পেশ করা হলে আদালত তাকে ২১ মে পর্যন্ত ইডির হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
ইডি জানিয়েছে, গোয়েলের ইউকো ব্যাঙ্কে দায়িত্বকালীন সময়ে CSPL-কে বিপুল ঋণ অনুমোদন করা হয়, যা পরে তছরুপ ও বিভিন্ন পথে বেহিসাবি খাতে খরচ করা হয়। ইডির বক্তব্য, এই ঋণের বিনিময়ে সুবোধ কুমার গোয়েল বিপুল পরিমাণে বেআইনি পারিতোষিক গ্রহণ করেন।
অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণের জটিল পদ্ধতি
ইডির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বেআইনি টাকার পরিমাণ নানান স্তরের লেয়ারিং-এর মাধ্যমে ও বিভিন্ন ফ্রন্ট কোম্পানির মাধ্যমে হোয়াইটমানি রূপে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। গোয়েল এই অর্থে নগদ টাকা, দামি সম্পত্তি, বিলাসবহুল সামগ্রী, হোটেল বুকিং ইত্যাদি লাভ করেন। এই সম্পদগুলির অনেকটাই তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের নামে রাখা হয়েছে।
ইডির মতে, তদন্তে একাধিক শেল কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে যেগুলি আসলে গোয়েল বা তার পরিবারের দ্বারা পরিচালিত। এই কোম্পানিগুলির উৎসধন সরাসরি CSPL থেকে এসেছে। এই অর্থের লেনদেনেও বহু অ্যাকমোডেশন এন্ট্রি ও স্তরবদ্ধ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের সূত্র মিলেছে।
CSPL প্রধানও গ্রেফতার
এই মামলায় কনকাস্ট স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের প্রধান সংजय সুরেকাকেও ডিসেম্বর, ২০২৪-এ গ্রেফতার করে ইডি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয় কলকাতার আদালতে। ইতোমধ্যেই সুরেকা ও CSPL-এর ৫১০ কোটি টাকার সম্পদ ইডি সংযুক্ত করেছে।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ও আর্থিক অপরাধ
এই মামলাটি আবারও সামনে আনছে দেশের আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ব্যাঙ্কিং খাতে দুর্নীতির প্রবণতাকে। সুবোধ গোয়েল একজন উচ্চপদস্থ সরকারি ব্যাঙ্ক আধিকারিক হয়েও যেভাবে একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন, তা শুধু দুর্নীতির উদাহরণ নয়, বরং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করার মত একটি ঘটনা।
ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, গোয়েলের নামে ও তার পরিবার-ঘনিষ্ঠদের নামে থাকা আরও সম্পদের খোঁজে তদন্ত জারি থাকবে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে এসব সম্পদ অবৈধ অর্থ থেকেই অর্জিত, তবে সেই সমস্ত সম্পত্তি সংযুক্ত করে মামলা শক্তিশালী করা হবে।
বর্তমানে গোয়েল ইডির হেফাজতে রয়েছেন, এবং ২১ মে আবার আদালতে পেশ করা হবে। তদন্তের গতি ও তথ্যের ভিত্তিতে এই মামলায় আরও গ্রেফতার বা সম্পত্তি সংযুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই ঘটনায় স্পষ্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে উচ্চপদে থাকা ব্যক্তিদের ভূমিকা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ একটি ব্যাঙ্কের অনৈতিক সিদ্ধান্ত লক্ষ লক্ষ সাধারণ আমানতকারীর অর্থ ও দেশের অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।