নেতৃত্ব, দর্শন ও ভবিষ্যতের ভিত্তিতে নজর কাড়ছেন এই ভারতীয় কোচ

ভারতীয় ফুটবলে (Indian Football) কোচ হিসেবে খালিদ জামিলের নাম দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। তবে জামশেদপুর এফসিতে (Jamshedpur FC) তার সাম্প্রতিক অবদান যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা…

Khalid Jamil in Indian Football

ভারতীয় ফুটবলে (Indian Football) কোচ হিসেবে খালিদ জামিলের নাম দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। তবে জামশেদপুর এফসিতে (Jamshedpur FC) তার সাম্প্রতিক অবদান যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ২০২৪-২৫ মরসুমে জামশেদপুর পঞ্চম স্থানে শেষ করে ২৪ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে। যদিও ট্রফি জয় হয়নি, তবুও তার ফুটবল দর্শন, স্টাইল ও দলে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা সকলের নজর কেড়েছে।

আইপিএল ফাইনাল প্রসঙ্গে ‘মহারাজের’ মন্তব্যে আশার আলো

   

খালিদ জামিলের কোচিং স্টাইল যেন স্প্যানিশ ফুটবলের ফ্লেয়ার বহন করে, কিন্তু এটি একেবারেই পজেশন-ভিত্তিক নয়। দ্রুতগতির খেলা, রক্ষণভিত্তিক সুশৃঙ্খল সংগঠন ও আক্রমণে ঝলমলে মোচড়—এই তিন উপাদানই তাঁর কৌশলের মূল ভিত্তি। দলের খেলোয়াড়রাও তাঁর অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্বে নিজেদের সেরাটা তুলে ধরেছে।

জামশেদপুরের মিডফিল্ডার প্রনয় হালদার বলেন, “খালিদ স্যার এক জন আদর্শ নেতা, আর সেই কারণে উনি AIFF কোচ অফ দ্য ইয়ার মতো সম্মান পেয়েছেন। তিনি কাউকে ফেভারিট করেন না, সব খেলোয়াড়কেই সমান গুরুত্ব দেন। খেলার সময় তার নির্দেশনা ছোট কিন্তু খুবই স্পষ্ট।”

সুনীল ছেত্রীর আগমনে বেঙ্গালুরুতে জ্বলে উঠল ব্লু টাইগ্রেসদের ক্যাম্প

সাফল্যের পথ শুধুই ট্রফি জয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না। যেমন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মিকেল আর্টেটার আর্সেনাল কিংবা ডি জার্বির ব্রাইটনের মতো দলগুলো ভবিষ্যতের জন্য ভিত গড়ছে—ঠিক তেমনভাবেই খালিদ জামিল জামশেদপুরে একটি শক্ত ভিত তৈরি করছেন।

তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হল ২০১৬-১৭ সিজনে আই-লিগে আইজল এফসিকে চ্যাম্পিয়ন করা। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম ক্লাব হিসেবে আই-লিগ জয় করে ইতিহাস গড়েছিল আইজল, আর তার পিছনে মূল কারিগর ছিলেন খালিদ জামিল। সেই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।

প্লে-অফের সমীকরণে ধোঁয়াশা! হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দিল্লির বাধা গুজরাট

Advertisements

আইজলের চেয়ারম্যান রবার্ট রোমাভিয়া রোইতে বলেন, “ওই সময়ে আমরা বড় নামের খেলোয়াড় কিনতে পারিনি। কিন্তু খালিদ জামিল একের পর এক আনকোরা প্রতিভা তুলে এনেছিলেন, যারা নিজেদের দক্ষতায় ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছিল। তিনিই ছিলেন সেই দলের আত্মা।”

এখন জামশেদপুর এফসিতে, যেখানে বড় নামের চুক্তির তুলনায় নিজস্ব অ্যাকাডেমি থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার দিকে বেশি জোর দেওয়া হয়, সেখানে খালিদ জামিল আদর্শ কোচ। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির মতো দেশের প্রাচীনতম ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে তরুণ প্রতিভা তুলে আনার কাজে খালিদ জামিল নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন।

ক্লাবের সিইও মুকুল চৌধুরী জানান, “আমি খালিদকে খেলোয়াড় থাকা কাল থেকেই চিনি। মুম্বাই এফসিতে কোচিং শুরু করার পর থেকেই তিনি যুব প্রতিভা তুলে আনার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। স্কুল-কলেজ ঘুরে প্রতিভা খুঁজতেন, এবং তাদের নিয়েই সুপারডিভিশন জিতেছিলেন।”

আত্মবিশ্বাসী রাজস্থান, প্লে-অফের টিকিটের লড়াইয়ে পাঞ্জাবের সামনে বৈভব চ্যালেঞ্জ

জামশেদপুর এফসি ২০২৫ সুপার কাপের ফাইনালেও উঠেছিল, যদিও ফাইনালে এফসি গোয়ার কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায়। এরপরেও দলের মনোবল ভেঙে পড়েনি। বরং প্রনয় হালদার জানিয়েছেন, “হার-জিত খেলার অঙ্গ। কিন্তু খালিদ স্যার যেভাবে আমাদের ফাইনালের পর অনুপ্রাণিত করেছেন, সেটা প্রশংসার যোগ্য। আমরা আবার লড়াই শুরু করব।”

খালিদ জামিল এখন শুধুই একজন কোচ নন, বরং একজন স্থপতি। যিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি দল গড়ে তুলছেন। তার নিখুঁত নেতৃত্ব, অনন্য দর্শন ও প্রতিভা খোঁজার দুর্দান্ত দক্ষতা জামশেদপুর এফসিকে ভারতের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও দীর্ঘস্থায়ী ক্লাবে পরিণত করতে পারবে বলেই আশাবাদী সমর্থক ও বিশ্লেষকরা।

জামশেদপুরের ভবিষ্যতের এই অভিযাত্রায় খালিদ জামিল হতে পারেন সেই নেতৃত্ব, যিনি দলকে শুধু শিখিয়ে নয়, পথ দেখিয়েও সামনে নিয়ে যাবেন।