Modi diplomatic strategy: ২০২৫ সালে, যখন ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর এক নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি বজায় রয়েছে, তখন কূটনৈতিক ময়দান তুমুল উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। যুদ্ধ এবার আর সীমান্তে নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে — আন্তর্জাতিক জনমত, কূটনৈতিক চ্যানেল এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর করছে ভারতের ভবিষ্যৎ অবস্থান। আর এই সংকটকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমন এক ঐতিহাসিক কৌশল অবলম্বন করেছেন, যা অনেকের স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনছে ১৯৭১ সালের ইন্দিরা গান্ধীর যুগ।
১৯৭১ সালে, পূর্ব পাকিস্তান সংকটে যখন ভারত আন্তর্জাতিক সমর্থন চাচ্ছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধী রাজনৈতিক বৈরিতা ভুলে জাতীয় স্বার্থে জনসংঘ নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে জাতিসংঘে পাঠিয়েছিলেন। আজ সেই একই ছাঁচে, মোদী বিরোধী নেতা কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ও AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে ভারতের কণ্ঠ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘অপারেশন সিঁদুর’ আন্তর্জাতিক প্রচার অভিযানে।
জাতীয় স্বার্থে একযোগে শশী থারুর ও ওয়াইসি
কূটনৈতিক দক্ষতা ও বহুভাষিক জ্ঞানের জন্য খ্যাত থারুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের মিথ্যাচার ভেদ করতে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বক্তব্য আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় অবস্থানকে তুলে ধরতে উপযুক্ত বলে মনে করছে কেন্দ্র। থারুর নিজেও জানিয়েছেন, “আমি বিনা দ্বিধায় এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে কিছুই নয়।”
অন্যদিকে, আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “আমি এখানে AIMIM এর প্রতিনিধি নই, আমি ভারতের প্রতিনিধি।” তিনি আরও বলেন, “আমার কাজ বিশ্বকে জানানো যে পাকিস্তান কীভাবে ভারতকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। পাকিস্তান মানবতার জন্য হুমকি, আর ভারত পাকিস্তান-প্ররোচিত সন্ত্রাসবাদের শিকার।”
সমালোচনার মুখে কংগ্রেস, প্রশংসায় বিরোধী দল
শশী থারুরকে কেন্দ্র সরকার মনোনীত করায় কংগ্রেসের একাংশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিজেপি নেতারা তাঁদের মন্তব্যে কংগ্রেসের ভেতরের দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার চিত্র তুলে ধরেছেন। বিজেপি নেতা গৌরব বল্লভ বলেন, “কংগ্রেসে যোগ্যতা নয়, চাটুকারিতা স্থান পায়। যখন প্রধানমন্ত্রী থারুরকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তখন কংগ্রেসের আপত্তির কারণ কী? আসলে যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কংগ্রেস সহ্য করতে পারে না।”
বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী জানান, “শশী থারুর বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। কংগ্রেস নিজেই তাঁকে এই পদে সুপারিশ করেছিল। আজ তাঁকেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ অনাস্থার প্রতিচ্ছবি।”
‘অপারেশন সিঁদুর’: নতুন যুগের কূটনৈতিক যুদ্ধ
সরকারের উদ্যোগে সাতটি পৃথক আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন দেশে ভারতের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী অবস্থান তুলে ধরবে। থারুর ও ওয়াইসি সেই সাতজন নেতার মধ্যে রয়েছেন, যারা বিশ্বে ভারতের বার্তা বহন করবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কাকে পাঠাবেন, সেটি তাঁর সিদ্ধান্ত। যেমন ১৯৭১ সালে কংগ্রেস সরকার বাজপেয়ীকে পাঠিয়েছিল। থারুর একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, যিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জানেন, তাই তাঁকে পাঠানো হয়েছে।”
এই পদক্ষেপে বিরোধী ও ক্ষমতাসীন নেতাদের একসাথে দেখা যাচ্ছে এক ঐক্যবদ্ধ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে, যেখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্য নয়, বরং জাতীয় স্বার্থই প্রধান।
‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু একটি কূটনৈতিক মিশন নয়, বরং ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য ও কৌশলগত দূরদর্শিতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। ঠিক যেমন ইন্দিরা বাজপেয়ীকে পাঠিয়ে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তেমনই মোদী আজ শশী থারুর ও ওয়াইসিকে দিয়ে বিশ্বমঞ্চে ভারতের বক্তব্য শক্তিশালীভাবে তুলে ধরার পথে এগোচ্ছেন। বিভাজনের রাজনীতির বাইরে গিয়ে, এই উদ্যোগে ফুটে উঠছে এক নতুন ভারতের ছবি — যেখানে জাতীয়তা সবার ওপরে।