গোল্ড লোন হবে আরও নিরাপদ ও স্বচ্ছ? দেখে নিন RBI-র প্রস্তাবিত ৯টি বিধান

ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) সম্প্রতি সোনা ভিত্তিক ঋণের জন্য একটি খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC)-র মধ্যে একরূপতা আনবে। খসড়া…

Gold Loans Safer and Transparent

ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) সম্প্রতি সোনা ভিত্তিক ঋণের জন্য একটি খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC)-র মধ্যে একরূপতা আনবে। খসড়া নির্দেশিকায় ৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে কার্যকর হলে সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।

এই নতুন নিয়মগুলি কার্যকর হলে ঋণ পাওয়া, ঋণের পরিমাণ, সোনা যাচাই এবং পরিশোধ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল এই ৯টি প্রস্তাবনা এবং কীভাবে তা আপনার সোনা ঋণে প্রভাব ফেলবে।

   

১. লোন-টু-ভ্যালু (LTV) অনুপাত সর্বোচ্চ ৭৫%:
আরবিআই প্রস্তাব করেছে যে, ব্যাঙ্ক বা NBFC কেউই সোনার মূল্যমানের ৭৫% এর বেশি ঋণ দিতে পারবে না। অর্থাৎ, আপনি যদি ₹১,০০,০০০ মূল্যের সোনা বন্ধক রাখেন, তাহলে সর্বোচ্চ ₹৭৫,০০০ ঋণ পাবেন। কোভিড সময়কালে এই অনুপাত কিছু ক্ষেত্রে ৮০% পর্যন্ত ছিল, যা এখন ৭৫% করা হচ্ছে।

২. মালিকানা প্রমাণ আবশ্যক:
ঋণগ্রহীতাকে সোনার মালিকানার প্রমাণ দিতে হবে। যদি মূল রসিদ না থাকে, তাহলে ঘোষণা পত্রে উল্লেখ করতে হবে কীভাবে মালিকানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

৩. সোনার বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট:
ঋণগ্রহীতাকে ব্যাঙ্ক/ঋণদাতা একটি বিশুদ্ধতা সার্টিফিকেট দেবে, যেখানে সোনার ক্যারেট, মোট ওজন, নেট ওজন এবং অন্যান্য ছাঁটাইয়ের বিবরণ থাকবে। এই সার্টিফিকেট দুই কপি হবে—একটি ঋণ ফাইলের সঙ্গে, অন্যটি ঋণগ্রহীতার কাছে।

৪. কোন সোনায় ঋণ পাওয়া যাবে:
শুধুমাত্র সোনার গয়না, অলঙ্কার এবং ব্যাঙ্ক বিক্রিত ২২ ক্যারেট বা তার বেশি বিশুদ্ধতার মুদ্রার ওপর ঋণ নেওয়া যাবে। MMTC-এর ইন্ডিয়া গোল্ড কয়েন শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক বিক্রিত হলে গ্রহণযোগ্য হবে।
বার, ইঙ্গট, বুলিয়ন, এবং প্রাইমারি গোল্ড বা সোনার ইটিএফ/মিউচুয়াল ফান্ড-এর উপর ঋণ পাওয়া যাবে না।

৫. রুপোর ওপর ঋণ:
এই প্রথম, রুপোর অলঙ্কার, গয়না এবং ব্যাঙ্ক বিক্রিত ৯২৫ বিশুদ্ধতার রুপোর মুদ্রার ওপরও ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকবে। রুপোর বার বা ইটিএফের ওপর ঋণ দেওয়া হবে না।

Advertisements

৬. ঋণের সীমা:
ব্যক্তি পিছু বন্ধক রাখা গয়নার ওজন ১ কেজি-র মধ্যে সীমিত থাকবে। ব্যাঙ্ক বিক্রিত সোনার মুদ্রার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম পর্যন্ত বন্ধক রাখা যাবে। NBFC ও ব্যাঙ্কগুলিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ নীতিমালার মাধ্যমে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

৭. সোনার মূল্য নির্ধারণের নিয়ম:
সব সময় ২২ ক্যারেট সোনার দামে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যদি বন্ধক রাখা সোনা ১৮ ক্যারেট হয়, তাহলে সেটিকে ২২ ক্যারেটের সমতুল্য করে হিসাব করতে হবে।

যেমন, ১০ গ্রাম ১৮ ক্যারেট সোনার দাম যদি ৭০,০০০ টাকা হয় এবং ২২ ক্যারেটের দাম ৮৫,০০০ টাকা হয়, তাহলে সেটির সমতুল্য ওজন হবে ৭,০০,০০০ টাকা ÷ ৮৫,০০০ টাকা = ৮.২৩৫ গ্রাম (২২ ক্যারেট হিসেবে)।

৮. ঋণচুক্তিতে সমস্ত বিবরণ বাধ্যতামূলক:
ঋণচুক্তিতে বন্ধক রাখা সোনার বিস্তারিত বিবরণ, মূল্য, নিলামের পরিস্থিতি, ঋণ মেটানোর সময়সীমা, নিলামের আগে কতদিনের নোটিশ দেওয়া হবে, ঋণ মেটানোর পরে কতদিনের মধ্যে সোনা ফেরত দেওয়া হবে এবং নিলামে বেশি টাকা উঠলে ফেরত দেওয়ার নিয়ম লিখিতভাবে থাকতে হবে।

৯. সোনা ফেরতের সময়সীমা ও দেরিতে জরিমানা:
ঋণ মেটানোর পর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বন্ধক রাখা সোনা ঋণগ্রহীতাকে ফেরত দিতে হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে ঋণদাতাকে প্রতিদিন ৫,০০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।

এই খসড়া এখনো চূড়ান্ত নয় এবং সাধারণ মানুষ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে এই নিয়মগুলি কার্যকর হলে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ঋণগ্রহণ আরও নিরাপদ ও সুসংগঠিত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।