নীরজের মাইলফলক নিয়ে বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদীর

ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন চিরস্মরণীয় হয়ে রইল। বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, জ্যাভলিন থ্রোতে ৯০ মিটারের সেই দুর্লভ সীমা পেরিয়েছেন নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)।…

Narendra Modi Congratulates Neeraj Chopra for make history at Doha Diamond League

ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন চিরস্মরণীয় হয়ে রইল। বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, জ্যাভলিন থ্রোতে ৯০ মিটারের সেই দুর্লভ সীমা পেরিয়েছেন নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)। দোহা ডায়মন্ড লিগ ২০২৫ (Doha Diamond League) নিজের তৃতীয় প্রচেষ্টায় ৯০.২৩ মিটার থ্রো করে এক নতুন অধ্যায় রচনা করলেন ভারতের ‘গোল্ডেন বয়’। যদিও সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে পারেননি তিনি, তবুও নিজের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সফল করলেন অবশেষে। তাকে নিয়েই সোশ্যাল বিশেষ পোস্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)।

   

এই মাইলফলক শুধুই পরিসংখ্যান নয়। এটি এক তপস্যার ফসল, এক প্রচেষ্টার গল্প, যা ভারতীয়দের হৃদয়ে গর্বের আবেগে সাড়া জাগায়। নীরজ দীর্ঘদিন ধরেই ৯০ মিটার পার করার লক্ষ্যে নিরন্তর পরিশ্রম করে আসছিলেন। অলিম্পিকে সোনা জেতার পরও এই একটি সীমা যেন তাকে তাড়া করে ফিরছিল। ২০২২ সালে স্টকহোমে ৮৯.৯৪ মিটার ছুঁড়েও খুব সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু এবার আর কোনও বাধা তাকে থামাতে পারেনি।

নতুন কোচ জ্যান জেলেজনির অধীনে প্রশিক্ষণের ফল যে কতটা কার্যকর, তা প্রমাণ করে দিল এই থ্রো। জেলেজনি নিজেও একজন কিংবদন্তি জ্যাভলিন থ্রোয়ার। তাঁর গাইডেন্সে নীরজ আরও শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং প্রযুক্তিগতভাবে নিখুঁত হয়েছেন। ফিটনেস, থ্রো টেকনিক, মানসিক দৃঢ়তা— সবকিছুর সমন্বয়েই তৈরি হয়েছে এই সফলতা।

দল গোছাতে গিয়ে বড়সড় ধাক্কা খেল ইস্টবেঙ্গল! ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া কোচ অস্কার

৯০ মিটারের এই থ্রো ভারতীয় অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। দেশের মধ্যে অনেকেই ভাবতেন, এমন থ্রো শুধুই ইউরোপিয়ান অ্যাথলেটদের নাগালের মধ্যে সম্ভব। কিন্তু নীরজ সেই ধারণাকে চূর্ণ করে দিলেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমে ভারতীয়রাও আন্তর্জাতিক মানের এমন উচ্চতাকে ছুঁতে পারে।

এই অসাধারণ কৃতিত্বের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই নীরজকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “এক অসাধারণ কৃতিত্ব। দোহা ডায়মন্ড লিগে ৯০ মিটার পার করে নিজের কেরিয়ারের সেরা থ্রো করল নীরজ চোপড়া। ধারাবাহিক একাগ্রতা, শৃঙ্খলা ও আবেগের ফসল এই সাফল্য।” সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এই বার্তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেশজুড়ে মানুষ উচ্ছ্বসিত, গর্বিত।

Advertisements

তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৯০.২৩ মিটার থ্রো করেও নীরজ দোহায় প্রথম স্থান পাননি। জার্মানির জুলিয়ান ওয়েবের ৯১.০৬ মিটার থ্রো করে তাঁকে পেছনে ফেলে দেন। যদিও এটি প্রতিযোগিতায় প্রথম না হওয়ার হতাশা আনতে পারে, তবুও নীরজের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি। কারণ তিনি জানতেন, এই থ্রো শুধুই একটি সংখ্যার খেলা নয়— এটি ছিল তাঁর বহুদিনের সংগ্রামের প্রতীক।

ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে এই কৃতিত্ব নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। যারা খেলা নিয়ে স্বপ্ন দেখে, তাদের কাছে নীরজ একটি জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। যে স্বপ্ন প্রথমে অসম্ভব মনে হয়, সেই স্বপ্নকে অর্জন করা যায়— যদি থাকে তপস্যা, ধৈর্য, এবং অধ্যবসায়।

এই ঐতিহাসিক থ্রোর মাধ্যমে নীরজ চোপড়া শুধু নিজের লক্ষ্য পূরণ করলেন না, ভারতীয় ক্রীড়াকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিলেন। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় সাফল্য অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য, কিন্তু আজকের এই দিনটি থাকবে স্মরণীয়, গর্বের, এবং দেশবাসীর হৃদয়ে চিরস্থায়ী।

নীরজকে অভিনন্দন এবং ভবিষ্যতের জন্য রইল অশেষ শুভেচ্ছা। ভারত যে এখন কেবল ক্রিকেটের দেশ নয়, বরং বিশ্বমানের অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ তৈরির দেশ, তা আবারও প্রমাণ করলেন আমাদের নায়ক।