৮ম বেতন কমিশনে সরকারের কী সিদ্ধান্ত আসছে, জানুন চূড়ান্ত আপডেট!

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হওয়ার পর…

8th Pay Commission to Fill 35 Posts via Deputation

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হওয়ার পর থেকে প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কর্মচারী সংগঠনগুলো নতুন বেতন কমিশনের দাবি জানিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে অষ্টম বেতন কমিশনের গঠন এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা সরকারের অগ্রগতি, বেতন কাঠামোর সম্ভাব্য পরিবর্তন এবং কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সরকারের অগ্রগতি: অষ্টম বেতন কমিশনের গঠন
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের জন্য মৌলিক অনুমোদন দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। এই কমিশনের কাজ হবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা। এই ঘোষণার ফলে প্রায় ৪৮.৬৭ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং ৬৭.৯৫ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মী এবং পেনশনভোগীরাও এই কমিশনের সুপারিশের আওতায় আসবেন।

   

তবে, সরকার এখনও কমিশনের চেয়ারপারসন এবং সদস্যদের নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা করেনি। সূত্রের খবর, শীঘ্রই একজন চেয়ারপারসন এবং দুজন সদস্য নিয়োগ করা হবে, যারা কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিভাগের সচিবের সঙ্গে জাতীয় যৌথ পরামর্শদাতা যন্ত্র পরিষদের (JCM) একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বেতন, পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধার শর্তাবলী (Terms of Reference) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী রাজ্যসভায় বলেছিলেন যে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে, কর্মচারী সংগঠনগুলোর ক্রমাগত চাপ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেতন কাঠামোর সম্ভাব্য পরিবর্তন
অষ্টম বেতন কমিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বেতন এবং পেনশন কাঠামোর সম্ভাব্য পরিবর্তন। সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে ন্যূনতম মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮,০০০ টাকা এবং ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, অষ্টম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ থেকে ৩.৬৮-এর মধ্যে হতে পারে।

সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা মূল বেতন এবং পেনশনকে ২.৫৭ গুণ বৃদ্ধি করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ হলে ন্যূনতম বেতন ৫১,৪৮০ টাকা এবং পেনশন ২৫,৭৪০ টাকা হবে। যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ৩.৬৮ হয়, তবে ন্যূনতম বেতন ৬৬,২৪০ টাকা এবং পেনশন ৩৩,১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

কর্মচারী সংগঠনগুলো দাবি করছে যে মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) ৫০% ছাড়িয়ে গেলে তা মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করা উচিত। বর্তমানে মহার্ঘ ভাতা ৫৩% এ রয়েছে। এছাড়াও, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাঁচ সদস্যের পরিবারকে (তিন সদস্যের পরিবর্তে) ইউনিট হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব উঠেছে, কারণ ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব সন্তানদের উপর রয়েছে।

Advertisements

কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের সম্ভাব্য সময়সীমা
অষ্টম বেতন কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ সপ্তম বেতন কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। সাধারণত, বেতন কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ১৮-২৪ মাস সময় লাগে। সেই হিসেবে, কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জমা দেওয়া হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন লোকসভায় বলেছেন, কমিশনের সুপারিশ গৃহীত হওয়ার পরই এর আর্থিক প্রভাব মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। সপ্তম বেতন কমিশন বাস্তবায়নের সময় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের উপর ১.০২ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক বোঝা পড়েছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের ক্ষেত্রে এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে, যা অর্থনীতিতে ভোগ বৃদ্ধি এবং চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যাশা
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মচারীরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে, এবং বেতন বৃদ্ধি তাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসবে। পেনশনভোগীরাও আশা করছেন যে পেনশন বৃদ্ধি পেলে তাদের দৈনন্দিন জীবন আরও সহজ হবে।

তবে, কিছু কর্মচারী সংগঠন এই ঘোষণার সময় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, আসন্ন নির্বাচনের কারণে এই ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। এছাড়াও, কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের আগে বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কিছু উদ্বেগ রয়েছে।

বিকল্প প্রস্তাব: স্বয়ংক্রিয় বেতন সংশোধন ব্যবস্থা
কিছু সূত্র জানিয়েছে, সরকার ঐতিহ্যবাহী বেতন কমিশনের পরিবর্তে একটি ‘স্বয়ংক্রিয় বেতন সংশোধন ব্যবস্থা’ চালু করার কথা বিবেচনা করছে। এই ব্যবস্থায় মহার্ঘ ভাতা ৫০% ছাড়িয়ে গেলে বেতন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধন করা হবে। তবে, এই প্রস্তাব এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

অষ্টম বেতন কমিশনের গঠন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি কেবল তাদের আর্থিক সুবিধা বাড়াবে না, বরং অর্থনীতিতে চাহিদা সৃষ্টি এবং ভোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য এখনও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কর্মচারী সংগঠনগুলোর দাবি এবং সরকারের সিদ্ধান্তের ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা হয়, তা এই কমিশনের সাফল্য নির্ধারণ করবে। আপাতত, ২০২৬ সালের শুরুতে নতুন বেতন কাঠামোর সম্ভাবনা কর্মচারীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে।