এবার ট্রাম্পের টার্গেট আমেরিকায় থাকা প্রবাসীরা

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আগের শাসনকালেই অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান ছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম…

trump

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আগের শাসনকালেই অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান ছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নতুন মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরপরই প্রবাসীদের জন্য কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন তিনি। তাঁর প্রশাসনের ভাবনায় এবার রেমিট্যান্স (Tax on Remittances) অর্থাৎ প্রবাসীদের নিজ দেশে পাঠানো অর্থের উপর কর আরোপের পরিকল্পনা। প্রস্তাবিত করহার ৫%।

এই ঘোষণার পর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আমেরিকায় থাকা বহু দেশের প্রবাসীদের মধ্যে। তবে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতীয় প্রবাসীদের উপর। কারণ, আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

   

ভারতীয়দের জন্য বড় ধাক্কা
বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক আছেন। তাঁদের অনেকে নাগরিকত্ব পাননি, তবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এবং কর প্রদানকারী। এঁদের একটি বড় অংশ নিয়মিতভাবে ভারতীয় পরিবার-পরিজনের কাছে অর্থ পাঠান। এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, যারা আমেরিকার নাগরিক নন, তাঁদের নিজ দেশে অর্থ পাঠানোর সময় পাঠানো টাকার উপর ৫% হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ, যদি কোনও ভারতীয় NRI ₹১ লক্ষ টাকা ভারতে পাঠান, তবে ₹৫,০০০ চলে যাবে আমেরিকার ফেডারেল কর সংস্থা, অর্থাৎ IRS-এর খাতে।

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি
ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য, প্রবাসীরা আমেরিকায় থেকে অর্থ উপার্জন করে বিপুল পরিমাণে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। এতে দেশের অর্থনীতি থেকে অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এই প্রবাহ রুখতে এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রেমিট্যান্সে কর বসানো অত্যাবশ্যক। এর মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করছেন ট্রাম্পপন্থীরা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ করদাতাদের সন্তুষ্ট করা এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।

ভারতীয় মহলে উদ্বেগ
এই প্রস্তাবের পর থেকেই ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এমনিতেই বিদেশে বসবাস করেও তাঁরা দ্বিগুণ করের বোঝা বইছেন। এবার রেমিট্যান্সে কর বসালে তাঁদের পরিবার-পরিজনের আর্থিক সহায়তা দিতে সমস্যা হবে। পাশাপাশি, এই সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ, রেমিট্যান্স ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় উৎস।

ভারত-পাক উত্তেজনা ও ট্রাম্পের মন্তব্য
এই কর প্রস্তাবের আগেই ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে ট্রাম্পের একটি মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। তিনি বলেন, “আমেরিকা তার স্বার্থকে সবার আগে রাখবে, যার প্রভাব পড়ুক না কেন।” এই বক্তব্যে ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে অসন্তোষের সুর শোনা গিয়েছে। নতুন কর প্রস্তাব সেই অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে দিল।

এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স ট্যাক্স কেবলমাত্র একটি প্রস্তাবনা। এটি কার্যকর করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। তবে ট্রাম্পের মত জনপ্রিয় নেতার মুখে এ ধরনের কঠোর নীতি নিয়ে কথা বলার অর্থ, ভবিষ্যতে এই ধরনের নীতি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা অমূলক নয়। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, প্রবাসীদের অবদান এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণ—সবই এখন পরীক্ষার মুখে।

এই প্রস্তাব কার্যকর হলে, শুধু ভারতীয় প্রবাসীদের নয়, তাঁদের দেশেও এর বড় প্রভাব পড়বে—অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক, উভয় দিক থেকেই।