এভারেস্ট অভিযান সফল করেও মর্মান্তিক মৃত্যু বাংলার অভিযাত্রীর

বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে (mountaineer) অভিযানের সময় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পর্বতারোহী সুব্রত ঘোষের (৪৫)। বৃহস্পতিবার (১৫ মে, ২০২৫) শৃঙ্গ জয়ের পর নামার সময়…

mountaineer from bengal dies in everest

বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে (mountaineer) অভিযানের সময় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পর্বতারোহী সুব্রত ঘোষের (৪৫)। বৃহস্পতিবার (১৫ মে, ২০২৫) শৃঙ্গ জয়ের পর নামার সময় হিলারি স্টেপের কাছে তিনি মারা যান। অভিযানের সংগঠক স্নোই হরাইজন ট্রেকসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বোধরাজ ভাণ্ডারী জানিয়েছেন, সুব্রত উচ্চতাজনিত অসুস্থতা (অল্টিটিউড সিকনেস) এবং চরম ক্লান্তির শিকার হয়ে নামতে অস্বীকার করেন, যার পরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সুব্রত ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের মাউন্টেনিয়ারিং (mountaineer) অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর (এমএকে)-এর নেতৃত্বাধীন স্নোই এভারেস্ট অভিযান ২০২৫-এর তিন সদস্যের দলের একজন ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রুম্পা দাস (৪৪) এবং অসীম কুমার মণ্ডল, তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

   

দলটি গত ৩১ মার্চ কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে। সুব্রত তাঁর শেরপা গাইড চম্পল তামাংয়ের (mountaineer) সঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এভারেস্টের শীর্ষে (৮,৮৪৯ মিটার) পৌঁছেছিলেন। রূপা দাসও একই দিন শৃঙ্গ জয় করেন, তবে অসীম কুমার মণ্ডল ক্যাম্প ৪ থেকে ফিরে আসেন।

কী ঘটেছিল হিলারি স্টেপে? (mountaineer)

হিলারি স্টেপ, (mountaineer) এভারেস্টের ‘ডেথ জোন’-এ অবস্থিত একটি কঠিন পাথুরে অংশ, যা দক্ষিণ কল (৮,০০০ মিটার) এবং শীর্ষের মধ্যে অবস্থিত। এই অঞ্চলে অক্সিজেনের মাত্রা এতটাই কম যে মানুষের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। সুব্রত শীর্ষে পৌঁছানোর পর নামার সময় ক্লান্তি ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তাঁর গাইড চম্পল তামাংয়ের সূত্র ধরে ভাণ্ডারী জানান, “সুব্রত নড়াচড়া করতে অস্বীকার করেছিলেন।”

চম্পল রাতে ক্যাম্প ৪-এ ফিরে এসে ঘটনাটি জানান। কিছু সূত্রের মতে, সুব্রতর দেহ হিলারি স্টেপের কাছে নয়, বরং ব্যালকনির উপরে থাকতে পারে। তাঁর দেহ বেস ক্যাম্পে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে, তবে ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

দলের অন্য সদস্যদের অবস্থা

রুম্পা দাস (mountaineer) সফলভাবে শৃঙ্গ জয় করলেও শারীরিক জটিলতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি । অসীম কুমার মণ্ডল নিরাপদে বেস ক্যাম্পের দিকে ফিরেছেন। সুব্রতর বোন সুমিত্রা দেবনাথ বেস ক্যাম্পে সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে ছিলেন।

চলতি মরশুমে এভারেস্টে মৃত্যু

চলতি মার্চ-মে অভিযান মরশুমে এভারেস্টে এটি দ্বিতীয় মৃত্যু। সুব্রতর আগে ফিলিপিন্সের পর্বতারোহী ফিলিপ দ্বিতীয় সান্তিয়াগো (৪৫) বুধবার দক্ষিণ কলে আরোহণের সময় মারা যান। এই মরশুমে নেপাল সরকার ৪৫৯টি আরোহণের অনুমতি দিয়েছে, এবং প্রায় ১০০ জন পর্বতারোহী ও তাঁদের গাইড ইতিমধ্যে শীর্ষে পৌঁছেছেন।

আইসিবির বিরুদ্ধে কেকেআরের একাদশে বড় রদবদল! বাদ পড়বেন তারকা ক্রিকেটার?

সুব্রত ঘোষ কে ছিলেন?

পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী (mountaineer)এবং শিক্ষক। তিনি কৃষ্ণনগরের মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাঁর এই অভিযান ছিল এভারেস্ট জয়ের একটি স্বপ্নের প্রয়াস।

পশ্চিমবঙ্গে শোকের ছায়া

সুব্রতর মৃত্যুর খবরে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা এবং পর্বতারোহণ সম্প্রদায় তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করছেন, পাশাপাশি এই ট্র্যাজেডিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছেন। এক্স-এ পোস্টে লিখেছেন, “১৭ ঘণ্টা খোঁজাখুজির পর হিলারি স্টেপের কাছে সুব্রত ঘোষের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।”

এভারেস্টের ঝুঁকি

এভারেস্টে আরোহণ (mountaineer) বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলির একটি। হিমালয়ান ডেটাবেসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০০ বছরে এভারেস্টে ৩৪৫ জনের বেশি পর্বতারোহী মারা গেছেন। ‘ডেথ জোন’-এ অক্সিজেনের অভাব, চরম আবহাওয়া এবং কঠিন ভূখণ্ড প্রায়ই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুব্রত ঘোষের মৃত্যু পশ্চিমবঙ্গের পর্বতারোহণ সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তাঁর সাহস ও উৎসর্গ সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে, তবে এই ঘটনা এভারেস্টের মতো চ্যালেঞ্জিং অভিযানে নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির গুরুত্বও স্মরণ করিয়ে দেয়।