Guidelines for Digital Gold Loans: ডিজিটাল ঋণ পরিষেবা নিয়ে বেড়ে চলা অভিযোগ ও গ্রাহকদের হয়রানির প্রেক্ষিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ডিজিটাল লেন্ডিং সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। ২০২৫ সালের ৮ মে প্রকাশিত “ডিজিটাল লেন্ডিং ডিরেকশনস, ২০২৫” নামে এই নতুন গাইডলাইনে ঋণ প্রদানের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আগের নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পদক্ষেপ
ডিজিটাল ঋণের অপব্যবহার রোধে RBI প্রথম পদক্ষেপ নেয় ২০২০ সালে। তখন একটি সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক ও NBFC-গুলিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে নির্দিষ্ট আচরণবিধি ও আউটসোর্সিং নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এরপর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরও বিস্তৃত “গাইডলাইন্স অন ডিজিটাল লেন্ডিং” জারি করে RBI, যেখানে ডিজিটাল লেন্ডিং অ্যাপগুলির সংজ্ঞা নির্ধারণ, Key Fact Statement (KFS) বাধ্যতামূলক করা, এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ আচরণ জোর দিয়ে বলা হয়।
তবে এত কিছুর পরেও বহু গ্রাহক অভিযোগ করেন, তাঁদের ভুল তথ্য দিয়ে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, গোপনে অতিরিক্ত চার্জ কাটা হচ্ছে, এবং ঋণ আদায়ে অসৎ ও হুমকিমূলক পন্থা গ্রহণ করছে কিছু অসরকারি এজেন্ট।
এই প্রেক্ষিতে আরবিআই এবার আরও কড়া ও বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করল, যেখানে প্রতিটি ধাপে প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
কী কী বদল এল ডিজিটাল গোল্ড লোনে?
বিশেষত ডিজিটাল গোল্ড লোন পরিষেবা, যা অনেক নিম্নআয়, গ্রামীণ বা অনিয়মিত চাকরিজীবী মানুষের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ঋণ-উৎস, সেখানেও এবার বড় পরিবর্তন এসেছে। এই পরিষেবাগুলিতে প্রায়ই Lending Service Provider (LSP) বা NBFC পার্টনারের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়, যেখানে গ্রাহক নিজে বুঝে উঠতে পারেন না কার সঙ্গে তাঁর আর্থিক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
LoanTap-এর চিফ বিজনেস অফিসার, অমিত ভেঙ্কেশ্বর বলেন, “নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন থেকে ঋণের টাকা সরাসরি ঋণগ্রহীতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে, কোনও তৃতীয় পক্ষ বা LSP-এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি ঋণের অফারে বাধ্যতামূলকভাবে KFS (Key Fact Statement) প্রদান করতে হবে, যা ডিজিটালি স্বাক্ষরিত হবে এবং তাতে APR (Annual Percentage Rate), ফি এবং জরিমানার তথ্য স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।”
কল ও মেসেজের নম্বরেও স্বচ্ছতা
আরবিআই আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে টেলিকম সন্ত্রাস রোধে। অনেক গ্রাহক ভুয়ো ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতা পরিচয়ে প্রতারক কল বা এসএমএস পেয়ে থাকেন। এখন থেকে শুধুমাত্র নির্ধারিত “1600xx” নম্বর থেকে ট্রানজ্যাকশনাল কল এবং “140xx” নম্বর থেকে প্রোমোশনাল কল/মেসেজ যাবে। এর ফলে গ্রাহক সহজেই বুঝতে পারবেন, তিনি কোনও আসল ঋণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলছেন কি না।
সাধারণ গ্রাহকের জন্য এর মানে কী?
নতুন নির্দেশিকা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বহু ডিজিটাল ঋণ পরিষেবা গ্রামীণ ও গিগ-ইকোনমি শ্রমিকদের কাছে বিকল্প অর্থসাহায্যের রূপে জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু নিয়মের অভাব ও অপারদর্শিতার কারণে বহু ক্ষেত্রেই এসব ঋণ দায়ে পরিণত হয়েছে।
“আরবিআইয়ের নতুন পদক্ষেপগুলি ডিজিটাল ঋণ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে। বিশেষ করে যারা এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে ছিলেন, তাঁদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ,” বলেন অর্থনীতি বিশ্লেষক পারমিতা ঘোষ।
নতুন গাইডলাইনের মাধ্যমে আরবিআই শুধুমাত্র ঋণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনেনি, বরং পুরো ডিজিটাল ঋণ ইকোসিস্টেমকে আরও জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রাহক-বন্ধু করে তোলার পথ তৈরি করেছে।