চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল মাসে ভারতের পণ্য রফতানি (India Exports) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলে দেশের পণ্য রফতানি ৯.০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮৪৯ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তবে এই রফতানির উত্থানের পাশাপাশি আমদানিও বড় আকারে বেড়েছে। সেই কারণে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ পৌঁছেছে ২৬৪২ কোটি ডলারে, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ভারতের আমদানি ১৯.১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪৯১ কোটি ডলারে। এর ফলে রফতানি এবং আমদানির মধ্যে ফারাক বা বাণিজ্য ঘাটতি ভয়ানকভাবে বেড়ে গিয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার উপর একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রফতানির বৃদ্ধির পেছনে সম্ভাব্য কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা বাড়া এবং নির্দিষ্ট কিছু খাতের ভালো পারফরম্যান্স ভারতের রফতানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বিশেষত, ইলেকট্রনিক পণ্য, কৃষিজ পণ্য, ওষুধ এবং রাসায়নিক দ্রব্য রফতানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় উৎপাদিত পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশই বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রফতানি পরিসংখ্যানে।
বাণিজ্য ও শিল্প সংগঠনগুলিও এই বৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলেই মনে করছে। তারা মনে করছে, সরকারের বিভিন্ন নীতিগত উদ্যোগ, যেমন রফতানি প্রণোদনা, উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা (PLI স্কিম), ও বৈদেশিক বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করার মতো পদক্ষেপ রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
আমদানি বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ
যদিও রফতানি বৃদ্ধির খবর স্বস্তিদায়ক, তবুও আমদানির বৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, অপরিশোধিত তেল, সোনার মতো দামি পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামালের ওপর ভারতের নির্ভরতা আমদানিকে বাড়িয়ে তুলেছে। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়াও এই ঘাটতি বাড়ার অন্যতম কারণ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি এই প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মুদ্রার মানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বাণিজ্য ঘাটতি: সরকারের উদ্বেগ
সরকারি মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্র একাধিক পরিকল্পনার কথা ভাবছে। বিশেষত, অনাবশ্যক আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা, ঘরোয়া উৎপাদন বাড়ানো এবং বিকল্প আমদানি উৎস খোঁজার মতো বিষয়গুলির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, “বিশ্ব অর্থনীতির চাহিদা বিবেচনায় ভারত রফতানির নতুন বাজার খুঁজছে। একই সঙ্গে আমদানি নির্ভরতাও কমানোর চেষ্টা চলছে।”
সামনের পথ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের মাসগুলোতে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তবে রফতানি আরও বাড়তে পারে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে, নইলে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
সবমিলিয়ে, এপ্রিল মাসে রফতানির ঊর্ধ্বগতি ভারতের অর্থনীতির পক্ষে একটি আশাব্যঞ্জক দিক হলেও, বাড়তে থাকা আমদানি ও বাণিজ্য ঘাটতি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে নতুন করে ভাবনার দিশা দেখাচ্ছে। এখন দেখার, সরকার কতটা কার্যকরীভাবে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।