ভারত-পাক নিয়ে অবস্থান বদল ডোনাল্ড ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump )। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আগে প্রকাশ্যে ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে…

Donald Trump Softens Stance on India-Pakistan Mediation Ahead of 2025 Elections

আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump )। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আগে প্রকাশ্যে ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে নিজের কৃতিত্ব দাবি করলেও, এবার সেই অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এলেন তিনি। সম্প্রতি এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “আমি বলব না আমি এটা করেছি, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আমি ব্যাপারটা মিটিয়ে দেওয়ার পেছনে অনেকটা সাহায্য করেছি।”

ট্রাম্পের আগের দাবি ছিল স্পষ্ট
গত কয়েক বছরে একাধিকবার ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, তাঁর হস্তক্ষেপেই নাকি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতে থাকা সীমান্ত উত্তেজনা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে হোয়াইট হাউসে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প বলেছিলেন, “নরেন্দ্র মোদি আমাকে অনুরোধ করেছেন কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করতে।” যদিও সেই দাবি সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করে দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং তাতে কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

   

এবার সুর নরম করলেন ট্রাম্প
তবে এখন, ২০২৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন, সেই পটভূমিতে তাঁর এই নতুন মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এবারের বক্তব্যে তিনি নিজেকে আর সরাসরি ‘শান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে তুলে ধরেননি। বরং কিছুটা কৌশলী ভঙ্গিতে বলেছেন, “আমি বলছি না আমি এটা করেছি, কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবেই সাহায্য করেছি।” বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য তাঁর আগের মন্তব্য থেকে একটি স্পষ্ট ‘ইউ-টার্ন’।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তনকে অনেকে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসেবেও দেখছেন। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কৌশলগত সম্পর্ক বর্তমানে অনেক গভীর। একইসঙ্গে আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটব্যাঙ্কে পরিণত হয়েছে। সেই কারণে ট্রাম্প ভারতবিরোধী কোনও অবস্থান নিতে চাইছেন না বলেই অনুমান রাজনৈতিক মহলের।

ভারত-পাক সম্পর্ক ও বাস্তবতা
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা ও বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের পরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পরে কূটনৈতিক স্তরে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরলেও, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরে সম্পর্ক আবার খারাপের দিকে মোড় নেয়।

এই অবস্থায় ট্রাম্পের ‘আমি করিনি, তবে সাহায্য করেছি’ ধরনের মন্তব্য অনেকটাই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি এই মন্তব্যে তিনি কোনও নির্দিষ্ট উদ্যোগ বা ফলাফলের উল্লেখ না করেও, নিজের প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন।

ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের নতুন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। অতীতেও এই ধরনের মন্তব্যে ভারত বরাবরই বলেছে, ভারত ও পাকিস্তানের সব দ্বিপাক্ষিক বিষয় আলোচনা হবে শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে, কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রশ্নই নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্তব্য ফের আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাঁর আগের দাবি ও বর্তমান মন্তব্যের মধ্যে যে বৈপরীত্য রয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে। অনেকেই বলছেন, এই পরিবর্তন শুধুই ভাষার কৌশল নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের এক কৌশলী পদক্ষেপ।