West Bengal CPI: ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে রাজ্যভিত্তিক মূল্যবৃদ্ধির হারে ভারতের এক বিস্ময়কর চিত্র উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বামশাসিত কেরলে, যেখানে এপ্রিল মাসে উপভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) ভিত্তিক মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে অনেক পিছিয়ে — মাত্র ২.৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে।
এই তথ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে বেশি। কেরলের পরই রয়েছে কর্ণাটক (৪.২৬%) ও জম্মু-কাশ্মীর (৪.২৫%)। পাঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডেও মূল্যবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪.০৯% ও ৩.৮১%।
অন্যদিকে, দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র মহারাষ্ট্রেও মূল্যবৃদ্ধির হার ২.৮৫%। গুজরাটে তা আরও কম — মাত্র ২.৫১%। দিল্লি, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়ে মূল্যবৃদ্ধির হার সবচেয়ে নিচু স্তরে অবস্থান করছে। দিল্লিতে এপ্রিলে মূল্যবৃদ্ধির হার মাত্র ১.৭৭ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডে ১.৭৯ শতাংশ, আর ছত্তিশগড়ে সর্বনিম্ন ১.৪৪ শতাংশ।
কেরলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনের কারণ
অর্থনীতিবিদদের মতে, কেরলে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, কেরলে খাদ্যপণ্য ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের অধিকাংশই অন্যান্য রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। এছাড়াও শ্রমিকঘন এবং পরিষেবাভিত্তিক অর্থনীতির কারণে উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। পাশাপাশি, কেরলে মজুরি হারও দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি, যা দ্রব্যমূল্যে প্রভাব ফেলে।
পশ্চিমবঙ্গের তুলনামূলক নিম্ন মূল্যবৃদ্ধি
পশ্চিমবঙ্গের মূল্যবৃদ্ধি ২.৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকায় রাজ্য সরকার কিছুটা স্বস্তিতে। তবে কিছু অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটির মানে এই নয় যে রাজ্যের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। বরং রাজ্যে ভোক্তা ব্যয়ের নিম্ন হার, কর্মসংস্থানের সংকট ও বাজারে চাহিদার ঘাটতি মূল্যবৃদ্ধি কম থাকার অন্যতম কারণ হতে পারে।
অন্যদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রাজ্যস্তরীয় সাবসিডি ও সরবরাহ ব্যবস্থাও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে বলে মনে করছেন নীতি বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রশ্ন উঠছে, মূল্যবৃদ্ধি কম থাকলেও রাজ্যের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে?
কেন্দ্রীয় স্তরে উদ্বেগ
মোটের ওপর, এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধি অনেকটাই ভিন্ন মাত্রায় চলছে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। একই দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে যদি মূল্যবৃদ্ধির হার এত বৈষম্যমূলক হয়, তবে একক নীতিমালা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে রাজ্যভিত্তিক নীতিমালা তৈরি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও অঞ্চলভিত্তিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে। কারণ, কেরলের মতো রাজ্যে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বা ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধি কম হলেও কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক গতি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরিসীম বৈচিত্র্যে ভরা ভারতের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজ্যভিত্তিক মূল্যবৃদ্ধির হারের এই পার্থক্য শুধু পরিসংখ্যানগত নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে রাজ্যের সামাজিক, উৎপাদনমুখী এবং রাজনৈতিক চরিত্র। কেরলের শীর্ষে থাকা এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক পিছিয়ে থাকা সেই চিত্রকে নতুন করে তুলে ধরছে।