ট্রাম্পের কথায় ভারত ছাড়বে অ্যাপল! কী বলছে কর্তৃপক্ষ

Apple India investment: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কাতারের রাজধানী দোহায় বৃহস্পতিবার তিনি জানান, অ্যাপলের সিইও টিম কুককে তিনি…

Trump to Apple CEO

Apple India investment: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কাতারের রাজধানী দোহায় বৃহস্পতিবার তিনি জানান, অ্যাপলের সিইও টিম কুককে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন যেন কোম্পানিটি ভারতে পণ্য উৎপাদন না করে। ট্রাম্পের সোজাসাপ্টা বক্তব্য, “আমি চাই না অ্যাপল ভারতে জিনিস তৈরি করুক।” তবে এই মন্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় অ্যাপল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতে তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কোনও পরিবর্তন আসেনি।

ভারতে অ্যাপলের বর্তমান প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম
বর্তমানে আইফোনের প্রায় ২০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে ভারতে। এই আইফোনগুলি মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। তবে অন্যান্য পণ্য যেমন আইপ্যাড, ম্যাকবুক এবং অ্যাপলের বেশিরভাগ পণ্য এখনো মূলত চিনে তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদনশীলতার দিক থেকে অ্যাপল দীর্ঘদিন ধরেই বহির্বিশ্বে নির্ভরশীল, বিশেষ করে চিনের উপর।

   

ভারত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অ্যাপল ইতিমধ্যে ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অ্যাপল আশ্বস্ত করেছে যে, ভারতীয় উৎপাদন পরিকল্পনা বহাল থাকছে এবং আগামী দিনে আরও বিস্তৃত হবে। জুন ত্রৈমাসিকেই ভারত থেকে আমেরিকান বাজারের জন্য বৃহৎ পরিমাণে আইফোন রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়েছেন টিম কুক।

ট্রাম্পের বক্তব্য ও যুক্তি
ট্রাম্প দাবি করেন, টিম কুকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন তিনি এবং স্পষ্ট করেছেন যে ভারতে উৎপাদন করাকে তিনি উৎসাহিত করেন না। ট্রাম্প বলেন, “ভারত বিশ্বের অন্যতম উচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশ, তাই সেখানে পণ্য বিক্রি করা খুব কঠিন।” তাঁর মতে, অ্যাপল যদি শুধুমাত্র ভারতের বাজারের জন্য ভারতে পণ্য তৈরি করে, তবেই তা যুক্তিযুক্ত।

এছাড়াও ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ভারত থেকে তাঁরা নিঃশুল্ক বাণিজ্যচুক্তির প্রস্তাব পেয়েছেন, তবে তাতে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা হয়নি। তিনি বলেন, “চিনে উৎপাদন আমরা বহু বছর ধরে মেনে নিয়েছি, কিন্তু ভারতে উৎপাদনের বিষয়টি আমাদের পছন্দ নয়।”

বাণিজ্য নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রেক্ষাপট
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক দফায় আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা একে অপরের দেশে সফর করেছেন এবং এপ্রিলের শেষেও ট্রাম্প বলেছিলেন, “ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পথে এগোচ্ছি।” তবে ট্রাম্পের এই মন্তব্য ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব
এখনও পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ভারত যতটা সম্ভব কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। কারণ, বর্তমান সময়ে অ্যাপল-সহ অন্যান্য মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থার বিনিয়োগ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাপলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ভারত আমাদের ভবিষ্যৎ উৎপাদন হাব। এখানে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে।” অর্থাৎ ট্রাম্প যা-ই বলুন, অ্যাপল আপাতত ভারতে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা করছে না।

এই বিতর্কের মাঝে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ট্রাম্পের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আর বাস্তব বিনিয়োগ নীতির সংঘাত ভবিষ্যতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গতিপথ ঠিক কোনদিকে নিয়ে যাবে?