দোহায় আম্বানির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাতারের আমিরের বৈঠক

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani) সম্প্রতি দোহায় এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কাতারের আমির…

Mukesh Ambani Meets Donald Trump and Qatar Emir in Doha for Strategic Global Talks

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani) সম্প্রতি দোহায় এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে। ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এই সাক্ষাৎ শুধুমাত্র রাজনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

রয়টার্স-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বৈঠক মুকেশ আম্বানির ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব ও কৌশলগত যোগাযোগের প্রমাণ। কাতারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (QIA), পূর্বে রিলায়েন্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও, আম্বানি বর্তমানে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং গুগল ও মেটার মতো মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের সঙ্গে তার দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব বিদ্যমান।

   

বিশ্ব বিনিয়োগে রিলায়েন্সের আরও গভীর সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত
এই বৈঠক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য ভবিষ্যতের নতুন বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে পারে। মার্কিন প্রযুক্তি খাত, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বিশেষত, কাতারের তহবিল যদি ভারতীয় শিল্প খাতে আরও সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করে, তবে রিলায়েন্স সহ ভারতের আর্থিক ব্যবস্থাও নতুন গতি পাবে।

যুক্তরাষ্ট্র-কাতার মেগা চুক্তির ঘোষণা
এই বৈঠকের সময়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার যৌথভাবে মোট $২৪৩.৫ বিলিয়ন ডলারের একাধিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি, একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামোও ঘোষণা করা হয়, যার মূল্য ধরা হয়েছে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার। এই চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কাতার এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে বোয়িং কোম্পানির কাছে রেকর্ডসংখ্যক চওড়া দেহের (widebody) বিমান ও GE Aerospace-এর ইঞ্জিনের অর্ডার। এটি বোয়িং-এর ইতিহাসে বৃহত্তম ৭৮৭ ড্রিমলাইনার অর্ডার হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে।

এই বিশাল অর্ডারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এক মিলিয়নেরও বেশি চাকরির সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়বে উৎপাদন, প্রযুক্তি, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে। চুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতেও যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতি
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আজ কাতারে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ও কাতার সরকারের মধ্যে কমপক্ষে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক বিনিময় সংক্রান্ত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেছেন, মোট $২৪৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যে, যার মধ্যে রয়েছে কাতার এয়ারওয়েজের কাছে বোয়িং বিমান ও GE Aerospace ইঞ্জিনের বিক্রয়।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই ঐতিহাসিক চুক্তিগুলি আগামী প্রজন্মের জন্য উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধির পথ তৈরি করবে, আমেরিকার উৎপাদন খাত ও প্রযুক্তিগত নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এক নতুন সোনালি যুগের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কাতারের মতো মিত্র রাষ্ট্রগুলোর এই সাফল্যে অংশগ্রহণ আমেরিকার বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।”

ভারতের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার বার্তা
এই বৈঠকে মুকেশ আম্বানির উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি কেবল তার ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট সাফল্যের স্বীকৃতি নয়, বরং ভারতীয় শিল্প ও ব্যবসার আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশগ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চলেছে। কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, জ্বালানি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের জন্য এই বৈঠক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

মুকেশ আম্বানির এই দোহা সফর এবং বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার আলোচনা নিঃসন্দেহে ভারতের ব্যবসা ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ট্রাম্প ও কাতারের আমিরের সঙ্গে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুধু আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির বার্তা বহন করে না, বরং ভারতীয় কর্পোরেট জগতের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশও স্থির করে দেয়। এমন বৈঠক ভারতকে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে দিতে পারে, যেখানে রিলায়েন্স একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।