পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়া অব্যাহত। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাঙ্ক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট-এর সিনিয়র ফেলো এবং প্রাক্তন পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন ভারতের অবস্থানকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন।
রুবিন এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই সংঘাতটি ভারত চায়নি। বরং, এটি ভারতের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাষ্ট্রের অধিকার আছে তার নাগরিকদের রক্ষা করার। সেটা কোনো ফরমাল আর্মি হোক বা সন্ত্রাসবাদী বাহিনী – উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিক্রিয়া জানানো আইনসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত।”
তিনি আরও বলেন, “শেষ পর্যন্ত, ভারতের উচিত একটি স্পষ্ট রেড লাইন টেনে দেওয়া এবং বলা – না, আমরা আমাদের সীমান্তে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ মেনে নেব না। এবং ভারত সেটাই করেছে যা একান্তভাবে প্রয়োজনীয় ছিল।”
রুবিনের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন ভারত তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় একাধিক অভিযান শুরু করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। সেনা সূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানে জঙ্গিদের অস্ত্রভাণ্ডার, প্রশিক্ষণ ঘাঁটি এবং গোপন রুটগুলো চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য শুধু ভারতের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী করে না, বরং পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপও তৈরি করে। মার্কিন প্রশাসন যদিও সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি, কিন্তু মাইকেল রুবিনের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বিশ্লেষকের বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। বিশেষ করে কাশ্মীর উপত্যকা ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিয়মিত অনুপ্রবেশ ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তানের আইএসআই এবং লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রভৃতি সংগঠনগুলোর নাম উঠে এসেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারত এই চক্রকে চাপে ফেলেছে বলে মত কূটনীতিকদের।
ভারতের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত বলা হয়েছে যে, এই অভিযান সম্পূর্ণভাবেই প্রতিরক্ষামূলক এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ভারত শুধু নিজের জন্য নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির স্বার্থেও এই ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।”
এই প্রেক্ষাপটে মাইকেল রুবিনের বক্তব্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত ভারতের এই অভিযান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেও আন্তর্জাতিক মহলে তাদের অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এই অভিযানে ভারতের সাহসী পদক্ষেপ এবং আমেরিকার কৌশলগত সমর্থন এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মঞ্চে এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।