সোলার গ্ৰুপের উদ্যোগে ভারতের ‘ভার্গবাস্ত্র’, কিভাবে কাজ করে জেনে নিন

ভারতের কাউন্টার ড্রোন সিস্টেমে আর ও একটি পালক যোগ হল। ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে সোলার ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস লিমিটেড (এসডিএএল) কর্তৃক নির্মিত…

vargavastra new counter drone system of india

ভারতের কাউন্টার ড্রোন সিস্টেমে আর ও একটি পালক যোগ হল। ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে সোলার ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস লিমিটেড (এসডিএএল) কর্তৃক নির্মিত নতুন কম খরচের কাউন্টার ড্রোন সিস্টেম ‘ভার্গবাস্ত্র’ (vargavastra) সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। হার্ড কিল মোডে কাজ করা এই সিস্টেমটি ড্রোন সোয়ার্মের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

ওড়িশার গোপালপুর রেঞ্জে পরীক্ষা

ওড়িশার গোপালপুর সিওয়ার্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ১৩ মে এই সিস্টেমের মাইক্রো রকেটগুলির কঠোর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়, (vargavastra) যেখানে এটি সমস্ত নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এয়ার ডিফেন্স (এএডি)-এর সিনিয়র কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনটি পরীক্ষা পরিচালিত হয়। দুটি পরীক্ষায় একটি করে রকেট নিক্ষেপ করা হয়, এবং একটি পরীক্ষায় দুই সেকেন্ডের মধ্যে দুটি রকেট সালভো মোডে নিক্ষেপ করা হয়।

   

সব মিলিয়ে চারটি রকেটই প্রত্যাশিতভাবে কাজ করেছে এবং প্রয়োজনীয় লঞ্চ প্যারামিটার অর্জন করেছে, যা বড় আকারের ড্রোন আক্রমণ প্রতিরোধে এর অগ্রগামী প্রযুক্তির প্রমাণ দেয়। ‘ভার্গবাস্ত্র’ (vargavastra) ড্রোনবিহীন আকাশযান (ইউএভি) হুমকির বিরুদ্ধে একটি একীভূত সমাধান হিসেবে কাজ করে।

সুপ্রিম কোর্টে ফের পিছোল রাজ্যের ডিএ মামলা! পরবর্তী শুনানি কবে?

সিস্টেমটির বিশেষত্ব (vargavastra)

এটি ২.৫ কিলোমিটার দূরত্বে ছোট আকারের আগত ড্রোন (vargavastra) সনাক্ত ও ধ্বংস করার উন্নত ক্ষমতা প্রদর্শন করে। এই সিস্টেমের প্রথম স্তরে ব্যবহৃত হয় অগাইডেড মাইক্রো রকেট, যা ২০ মিটারের প্রাণঘাতী ব্যাসার্ধের মাধ্যমে ড্রোন সোয়ার্ম নির্মূল করতে সক্ষম।

দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে গাইডেড মাইক্রো-মিসাইল, যা পূর্বে পরীক্ষিত হয়েছে এবং নির্ভুল নির্মূল নিশ্চিত করে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অনন্য অপারেশনাল চাহিদা পূরণের জন্য এই সিস্টেমটি বিভিন্ন ভূখণ্ডে, বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

এসডিএএল খরচ-কার্যকারিতার উপর জোর দিয়েছে

এসডিএএল ‘ভার্গবাস্ত্র’ (vargavastra) সিস্টেমের অভিযোজনযোগ্যতা এবং খরচ-কার্যকারিতার উপর জোর দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ স্বদেশী নকশায় তৈরি এবং শত্রু ইউএভি নির্মূলের জন্য নিবেদিত রকেট ও মাইক্রো-মিসাইল দিয়ে সজ্জিত। সিস্টেমটি মডুলার, যার ফলে রাডার, ইলেক্ট্রো-অপটিকাল (ইও) এবং আরএফ রিসিভারের মতো সেন্সরগুলি ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী কনফিগার করা যায়।

এটি স্তরবিশিষ্ট এবং দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য একীভূতভাবে কাজ করে। এছাড়াও, সিস্টেমটি জ্যামিং এবং স্পুফিংয়ের মতো সফট-কিল স্তর সংযোজনের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর সব শাখার জন্য একটি সমন্বিত এবং ব্যাপক প্রতিরক্ষা ঢাল প্রদান করতে পারে(vargavastra)। ‘ভার্গবাস্ত্র’ একটি অত্যাধুনিক কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারে সজ্জিত, যা উন্নত সিফোরআই (কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশনস, কম্পিউটারস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

এর রাডার ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে ক্ষুদ্র আকাশযান সনাক্ত করতে সক্ষম। ইলেক্ট্রো-অপটিকাল/ইনফ্রারেড (ইও/আইআর) সেন্সর স্যুট কম রাডার ক্রস-সেকশন (এলআরসিএস) লক্ষ্যগুলির সুনির্দিষ্ট সনাক্তকরণ নিশ্চিত করে। এই সিস্টেমটি অপারেটরদের একটি ব্যাপক পরিস্থিতিগত সচেতনতা প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা একক ড্রোন বা পুরো সোয়ার্মের বিরুদ্ধে মূল্যায়ন ও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তিতে একটি বড় অগ্রগতি

বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে এই সিস্টেমটি কাউন্টার-ড্রোন প্রযুক্তিতে একটি বড় অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে(vargavastra)। এর উন্মুক্ত-উৎস স্থাপত্য ইঙ্গিত দেয় যে, যদিও বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ মাইক্রো-মিসাইল ভিত্তিক সিস্টেম তৈরি করছে, তবুও ‘ভার্গবাস্ত্র’-এর মতো স্বদেশীভাবে নির্মিত, বহু-স্তরীয় এবং খরচ-কার্যকর কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম, যা সোয়ার্ম নির্মূল ক্ষমতা সম্পন্ন, বিশ্বের অন্য কোথাও এখনও মোতায়েন করা হয়নি।

“মেক ইন ইন্ডিয়া” মিশন

এটি “মেক ইন ইন্ডিয়া” মিশনের জন্য আরেকটি গর্বের মুহূর্ত এবং ভারতের ইতিমধ্যে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স ছাতার আরও উন্নতির একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ। এই সফল পরীক্ষা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে, যেখানে পাকিস্তান গত সপ্তাহে ভারতীয় শহরগুলিতে ড্রোন আক্রমণের চেষ্টা করেছিল।

‘ভার্গবাস্ত্র’ (vargavastra) সিস্টেমটি এই ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা প্রদানে পারদর্শী। ইন্ডিয়ান আর্মি এয়ার ডিফেন্সের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গোপালপুরে পরীক্ষাগুলি পরিচালিত হয়েছিল, যা ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সিস্টেমটি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর নেটওয়ার্ক-সেন্ট্রিক যুদ্ধের পরিকাঠামোর সঙ্গে নির্বিঘ্নে একীভূত হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা এটিকে আধুনিক যুদ্ধের জন্য আরও কার্যকর করে তোলে।

প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতা

‘ভার্গবাস্ত্র’ (vargavastra) সিস্টেমের সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি প্রমাণ করে যে ভারত উদ্ভাবনী এবং খরচ-কার্যকর সমাধান তৈরি করতে সক্ষম, যা আধুনিক যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। এই সিস্টেমটি ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানির সম্ভাবনাও বাড়ায়, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক এবং অন্যান্য দেশের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।

সোলার গ্রুপের উদ্যোগ এবং ‘ভার্গবাস্ত্র’ (vargavastra) সিস্টেমের উন্নয়ন ভারতের প্রতিরক্ষা উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। এই সিস্টেমটি কেবল ভারতের এয়ার ডিফেন্স ক্ষমতা বাড়াবে না, বরং বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করবে। ভবিষ্যতে আরও কঠোর পরীক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে, যা এই সিস্টেমটিকে সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির পথ প্রশস্ত করবে।