ভারতীয় শেয়ার বাজার (Stock Market) বুধবার সকালে একটি ইতিবাচক শুরু করেছে, যা মিশ্র বৈশ্বিক ইঙ্গিতের দ্বারা সমর্থিত। বাজার খোলার সময়, বিএসই সেনসেক্স ১৬০.৪৭ পয়েন্ট বা ০.২০% বেড়ে ৮১,৩০৮.৬৯-এ পৌঁছেছে, এবং এনএসই নিফটি৫০ ৫৯.৪০ পয়েন্ট বা ০.২৪% বৃদ্ধি পেয়ে ২৪,৬৩৭.৭৫-এ অবস্থান করছে। সকাল ৯:২৯ নাগাদ, সেনসেক্স ৪৬২.২৭ পয়েন্ট বেড়ে ৮১,৬১০.৪৯-এ এবং নিফটি৫০ ১৩৫.৩৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ২৪,৭১৩.৭০-এ ট্রেড করছে। এই উত্থানের পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এপ্রিল মাসের খুচরা মুদ্রাস্ফীতির তথ্য, যা মার্চ মাসের ৩.৩৪% থেকে কমে ৩.১৬%-এ নেমেছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি করেছে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বাড়িয়েছে।
বাজারের গতিবিধি ও প্রধান সূচক
বুধবার সকালে শেয়ার বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বৈশ্বিক বাজারের মিশ্র সংকেতের মধ্যেও অব্যাহত ছিল। সকাল ৬:৪৭-এ, গিফট নিফটি ফিউচার ২৪,৭৩৫.৫-এ ট্রেড করছিল, যা নিফটি ফিউচারের পূর্ববর্তী বন্ধের তুলনায় প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেশি। এটি ভারতীয় বাজারের শক্তিশালী শুরুর ইঙ্গিত দেয়। বৈশ্বিক বাজারে, টোকিও সময় সকাল ৯:৪১-এ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার স্থিতিশীল ছিল, যা মার্কিন বাজারের স্থিতিশীল শুরুর ইঙ্গিত দেয়। হংকং-এর হ্যাং সেং ফিউচার ১.১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সেখানে ইতিবাচক মনোভাব প্রতিফলিত করে। তবে, জাপানের নিক্কেই ২২৫ ফিউচার ০.১% এবং টপিক্স ০.৬% হ্রাস পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ প্রায় স্থিতিশীল ছিল, এবং ইউরো স্টক্স ৫০ ফিউচার ০.২% কমেছে, যা ইউরোপীয় বাজারে মন্দ শুরুর ইঙ্গিত দেয়।
প্রধান শেয়ারের পারফরম্যান্স
সেনসেক্সের মধ্যে টাটা স্টিল, ভারতি এয়ারটেল, ইনফোসিস, টেক মাহিন্দ্রা, এবং বাজাজ ফিনসার্ভ শীর্ষে ছিল, যারা ১-৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টাটা স্টিল ৪% বেড়েছে, কারণ কোম্পানিটি ২০২৬ সালের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকার একটি বড় মূলধন ব্যয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ভারতি এয়ারটেলও প্রায় ৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মার্চ ত্রৈমাসিকে তাদের শক্তিশালী আয়ের ফলাফলের জন্য দায়ী। কোম্পানিটি ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রভাবে সমন্বিত নিট মুনাফায় প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি রিপোর্ট করেছে, যা ১১,০২২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এয়ারটেলের গড় প্রতি ব্যবহারকারীর আয় (ARPU) ১৭% বেড়ে ২৪৫ টাকায় পৌঁছেছে, এবং ভারতের গ্রাহক সংখ্যা ৪২.৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে, টাটা মোটরস, এশিয়ান পেইন্টস, নেসলে ইন্ডিয়া, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক এবং এইচইউএল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। টাটা মোটরসের শেয়ার ৩% কমেছে, কারণ কোম্পানিটি জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে ৫১% নিট মুনাফা হ্রাস রিপোর্ট করেছে, যা ৮,৪৭০ কোটি টাকায় নেমেছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
এপ্রিল মাসে ভারতের খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ৩.১৬%-এ নেমে এসেছে, যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই হ্রাস প্রধানত খাদ্য মূল্যের তীব্র পতনের কারণে ঘটেছে, যা তীব্র তাপপ্রবাহ সত্ত্বেও প্রচুর ফসলের কারণে সম্ভব হয়েছে। এই তথ্য বাজারের জন্য একটি বড় উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছে, কারণ এটি আরবিআই-এর সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর পথ প্রশস্ত করতে পারে। বার্কলেসের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন জুন মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার কমানোর প্রত্যাশা করছে, যা আগস্টের পূর্বাভাসের তুলনায় আগে। এছাড়া, আজ পরে পাইকারি মূল্য মুদ্রাস্ফীতির তথ্য প্রকাশিত হবে, যা বিনিয়োগকারীরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।
বৈদেশিক বিনিয়োগ ও এমএসসিআই সূচক পরিবর্তন
বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (এফআইআই) কার্যকলাপ বাজারের গতিবিধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার, এফআইআই-রা ৪৭৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে, যা তিন দিনের মধ্যে তাদের দ্বিতীয় নেট বিক্রির দিন। তবে, গত সপ্তাহে তারা ১৭,৪২৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে, যা শক্তিশালী দেশীয় অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয় এবং ইতিবাচক বৈশ্বিক ইঙ্গিতের দ্বারা সমর্থিত। দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (ডিআইআই) মঙ্গলবার ৪,২৭৩ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা এনেছে।
এছাড়া, এমএসসিআই-এর মে মাসের সূচক পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। করোমান্ডেল ইন্টারন্যাশনাল এবং এফএসএন ই-কমার্স ভেঞ্চারস (নাইকা) এমএসসিআই গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড সূচকে যুক্ত হয়েছে, যা প্যাসিভ ফান্ডের প্রবাহ বাড়াতে পারে। এই পরিবর্তনের ফলে বুধবার নাইকা এবং অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
চতুর্থ ত্রৈমাসিক আয় ও সেক্টর পারফরম্যান্স
চতুর্থ ত্রৈমাসিক আয়ের ঘোষণা বাজারের গতিবিধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই) শেয়ার বুধবার সকালে ১৪.৪% বেড়েছে, কারণ কোম্পানিটি চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ১১৮% নিট মুনাফা বৃদ্ধি রিপোর্ট করেছে, যা ২২৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে, সেক্টরের দিক থেকে, নিফটি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, আইটি, মেটাল, পিএসইউ ব্যাঙ্ক, রিয়েলটি, এবং তেল ও গ্যাস সূচকগুলি ০.৫% থেকে ২% বৃদ্ধি পেয়েছে। নিফটি মেটাল সূচক ১.৯৩% বৃদ্ধি পেয়ে শীর্ষে ছিল। তবে, ফার্মা এবং এফএমসিজি সেক্টর কিছুটা চাপের মুখে ছিল।
ভারতীয় শেয়ার বাজার বুধবার একটি শক্তিশালী শুরু করেছে, যা কম মুদ্রাস্ফীতি, শক্তিশালী কর্পোরেট আয়, এবং মিশ্র বৈশ্বিক ইঙ্গিতের দ্বারা সমর্থিত। টাটা স্টিল এবং ভারতি এয়ারটেলের মতো শেয়ারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, এমএসসিআই সূচক পরিবর্তন, এবং সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি করেছে। তবে, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের নেট বিক্রি এবং বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা বাজারে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের পাইকারি মূল্য মুদ্রাস্ফীতির তথ্য, চলমান আয়ের ঘোষণা, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নজর রাখা উচিত