নয়া প্রযুক্তির হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাটা

বহু দশকের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সংস্থা বাটা ইন্ডিয়া (Bata India) আবারও নিজেদের উৎপাদন পরিকাঠামোতে বড়সড় পরিবর্তন এনে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাটানগর প্ল্যান্টে সম্প্রতি…

Bata India, Batanagar plant,DESMA-PUDIP technology,Bata India production, Bata Make in India ,

বহু দশকের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সংস্থা বাটা ইন্ডিয়া (Bata India) আবারও নিজেদের উৎপাদন পরিকাঠামোতে বড়সড় পরিবর্তন এনে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাটানগর প্ল্যান্টে সম্প্রতি সংস্থাটি চালু করেছে অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন DESMA-PUDIP (Polyurethane Direct Injection Process) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি হাই-ক্যাপাসিটি মেশিন। এই আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজনের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি আরও উন্নতমানের ও নির্ভুল পণ্য তৈরির পথও সুগম হচ্ছে।

উৎপাদনে প্রযুক্তির নতুন ছোঁয়া
DESMA-PUDIP প্রযুক্তিটি মূলত উন্নত রোবটিক ব্যবস্থা এবং অটোমেটেড প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে কাজ করে। এতে রোবোটিক স্প্রে ও রাফেনিং আর্ম, অটোমেটেড মোল্ড হ্যান্ডলিং এবং সরাসরি সোল সংযুক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ফিচার রয়েছে। যার ফলে শ্রমনির্ভরতা কমে গিয়ে উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতিটি জুতোর গুণমান ও একরূপতা বজায় রাখাও সহজ হচ্ছে।

   

এই প্রযুক্তিগত সংযোজন শুধু উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও বেশি কর্মক্ষম করে তুলবে না, বরং ভারতীয় বাজারে বাটার পণ্যের মান ও প্রতিযোগিতামূলক দামের নিরিখেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন শিল্প বিশেষজ্ঞরা।

বাটানগরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
বাটানগর শুধু একটি উৎপাদন কেন্দ্রই নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক শহর, যার গোড়াপত্তন ১৯৩৪ সালে চেক উদ্যোক্তা টমাস বাটা করেছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে গড়ে তোলেন এই শহর, যেখানে ছিল বাটার নিজস্ব উৎপাদন কেন্দ্রের পাশাপাশি শ্রমিকদের বসবাসের জন্য আবাসিক এলাকা। সেই সময় থেকেই বাটানগর হয়ে ওঠে ভারতের অন্যতম প্রধান জুতো উৎপাদন কেন্দ্র।

আজও এই শহর বাটা ইন্ডিয়ার অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে চলেছে। আর নতুন প্রযুক্তির সংযোজনে এখানকার ভূমিকা আরও মজবুত হবে বলেই মনে করছে সংস্থা।

Advertisements

স্থানীয় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান
এই উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন শুধু উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, স্থানীয় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় যুবসমাজের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।

বাটা ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমাদের লক্ষ্য হল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অন্তর্গত হয়ে আরও বেশি করে ঘরোয়া উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া। বাটানগরে DESMA-PUDIP মেশিন চালুর মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা একধাপ এগিয়ে গেলাম।”

ভবিষ্যতের রূপরেখা
বাটানগরে এই প্রযুক্তির সাফল্যের পর সংস্থা আগামী দিনে অন্যান্য উৎপাদন কেন্দ্রেও এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের কথা ভাবছে। পাশাপাশি, তারা নতুন ডিজাইন, পরিবেশবান্ধব উপাদান এবং আরও টেকসই উৎপাদন কৌশলের ওপরও কাজ করছে।

এই সমস্ত উদ্যোগ মিলিয়ে বাটা ইন্ডিয়া শুধু তাদের ঐতিহ্য নয়, বরং প্রযুক্তিগত আধুনিকতাকেও আপন করে ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে।