Operation Sindoor Tensions: ভারত সরকার মঙ্গলবার পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মচারীকে তাদের “পদের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কার্যকলাপের” জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। সূত্রের খবর, এই ব্যক্তি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর একজন কর্মী এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তান হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের কাছে একটি ডিমার্শ জারি করা হয়েছে বলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়নে, পাঞ্জাব পুলিশ গত রবিবার দুজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা এই পাকিস্তানি কর্মচারীর সঙ্গে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পাঞ্জাবের পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিজিপি) গৌরব যাদব জানিয়েছেন, নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানের একজন হ্যান্ডলারের কাছে ফাঁস করছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই দুজন ব্যক্তি গোপন তথ্যের বিনিময়ে অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাচ্ছিলেন। তারা হ্যান্ডলারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে ছিলেন এবং তার নির্দেশে স্থানীয় অন্যান্য এজেন্টদের কাছে তহবিল পাঠাচ্ছিলেন। ডিজিপি আরও জানান, দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এই বহিষ্কার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে প্রথম কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই মাসের শুরুতে, ভারত লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি), জৈশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) এবং হিজবুল মুজাহিদিন (এইচএম)-এর নয়টি সন্ত্রাসী আস্তানা ধ্বংস করার জন্য অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে হস্তক্ষেপ করে এবং সীমান্ত জেলাগুলিতে ড্রোন পাঠায় এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলি শুরু করে। ভারত এর জবাবে একটি আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করে, যার ফলে পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) পরাজিত হয় এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor): ভারতের সাফল্য এবং পাকিস্তানের ক্ষতি
ভারতের অপারেশন সিঁদুর পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এই অভিযানে ভারতীয় বাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংস করেছে এবং পাকিস্তানের সামরিক প্রতিক্রিয়াকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করেছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর উপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এই অভিযানে ভারত কয়েকটি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত এই অভিযোগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার শূন্য সহনশীলতার নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গুপ্তচরবৃত্তি এবং সীমান্ত উত্তেজনা
পাঞ্জাবে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তির ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশ বাহিনীর সতর্কতা এবং দক্ষতার প্রমাণ। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য প্রমাণাদি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরে পাকিস্তান-সমর্থিত গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্কের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
সীমান্তে চলমান উত্তেজনা এবং গোলাগুলির মধ্যে ভারত তার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি জোরদার করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাকিস্তানের আগ্রাসী সামরিক অবস্থান এবং সন্ত্রাসীদের প্রতি তাদের সমর্থন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কূটনৈতিক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ
পাকিস্তানি কর্মচারীর বহিষ্কার এবং অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য ভারতের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। পাকিস্তান এই বহিষ্কারের জবাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে। তবে, ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সে সন্ত্রাসবাদ এবং গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে কোনও আপস করবে না।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভারতের পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার প্রতিশ্রুতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি তার অঙ্গীকারের প্রমাণ। আগামী দিনগুলিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক কোন দিকে যায়, তা নির্ভর করবে দুই পক্ষের কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের উপর।