ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে গত এক দশকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সাম্প্রতিক পোস্টে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা বাজেট (budget) ছিল ২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকায়।
বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ (budget)
এই বৃদ্ধির (budget) পাশাপাশি কৌশলগত সংস্কার, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভারত শুধু প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভরই হয়নি, বরং বিশ্বব্যাপী একটি বিশ্বস্ত প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই অগ্রগতি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পোস্টে বলা হয়েছে, “২০১৩-১৪ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২৫-২৬ সালে বেড়ে ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কৌশলগত সংস্কার, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং উদ্ভাবন দেশীয় উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করেছে।
ভারত এখন প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভর এবং বিশ্বব্যাপী বিশ্বস্ত রপ্তানিকারক। এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করছে।” এই বিবৃতি ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের সাম্প্রতিক অর্জন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করেছে।
The defence budget increased from Rs 2.53 lakh crore in 2013-14 to Rs 6.81 lakh crore in 2025-26. Strategic reforms, private sector participation, and innovation have boosted indigenous manufacturing, making India a self-reliant, globally trusted defence exporter while… pic.twitter.com/g8L56K3eNU
— Ministry of Defence, Government of India (@SpokespersonMoD) May 13, 2025
গত এক দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে (budget) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যকর করা হয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হয়েছে, যার ফলে অত্যাধুনিক অস্ত্র, যুদ্ধবিমান, নৌযান এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে ভারত উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল), ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণস্বরূপ, তেজস যুদ্ধবিমান, অরিহান্ত-শ্রেণির পারমাণবিক সাবমেরিন এবং ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেশীয় প্রযুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বেসরকারি খাতের (budget) অংশগ্রহণ এই সাফল্যের অন্যতম চালিকাশক্তি। টাটা, রিলায়েন্স, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া, স্টার্টআপ এবং ছোট-মাঝারি শিল্পগুলো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং সমাধান নিয়ে এসেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২১,০০০ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে(budget)। ভারত এখন ৮৫টিরও বেশি দেশে অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি রপ্তানি করছে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ।
প্রতিরক্ষা বাজেটের এই বৃদ্ধি শুধু সামরিক সক্ষমতা বাড়ায়নি, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রেখেছে। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ অর্থনীতির অন্যান্য খাত, যেমন ইস্পাত, ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তি শিল্পকেও উৎসাহিত করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ১৬,০০০টিরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) বর্তমানে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের অধীনে ৪০০টিরও বেশি আইটেমের আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা দেশীয় উৎপাদনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
সন্ত্রাসে আর ছাড় নয়, প্রত্যাঘাত হবে প্রবল: হুঁশিয়ারি মোদীর
বাজেটের গুরুত্ব
জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এই বাজেট বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অস্থিরতার প্রেক্ষিতে আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী নতুন প্রযুক্তি এবং অস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে(budget)।
উদাহরণস্বরূপ, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাফাল যুদ্ধবিমান এবং আইএনএস বিক্রান্তের মতো উদ্যোগ ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে। এছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা এবং মহাকাশ প্রতিরক্ষার মতো নতুন ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিরক্ষা বাজেটের এই বৃদ্ধি এবং সংস্কার ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে। ভারত এখন কেবল অস্ত্র আমদানিকারক দেশ নয়, বরং একটি উদীয়মান রপ্তানিকারক শক্তি।
বাজেটের চ্যালেঞ্জ
তবে, চ্যালেঞ্জও (budget) রয়েছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া, বেসরকারি খাতের সঙ্গে আরও সহযোগিতা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলের প্রসার প্রতিরক্ষা খাতের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই ঘোষণা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। ‘এক্স’-এ বহু ব্যবহারকারী এই অগ্রগতিকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, প্রতিরক্ষা বাজেটের বরাদ্দ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো খাতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি, যা ভারসাম্যের প্রশ্ন তুলেছে।
আগামী দিনে ভারতের প্রতিরক্ষা খাত কীভাবে আরও অগ্রসর হয়, তা বিশ্বব্যাপী ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ভারতের এই অগ্রগতি দেশের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির সমন্বয়ের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।