নিরাপদ অবসরের জন্য কোন ৫টি স্কিম সবচেয়ে ভালো?

Retirement Planning: অবসর গ্রহণের পর একটি নিরাপদ এবং আরামদায়ক জীবনযাপনের জন্য অবসর পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবসর গ্রহণের পর নিয়মিত আয় বন্ধ হয়ে যায় এবং শুধুমাত্র…

retirement planning india

Retirement Planning: অবসর গ্রহণের পর একটি নিরাপদ এবং আরামদায়ক জীবনযাপনের জন্য অবসর পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবসর গ্রহণের পর নিয়মিত আয় বন্ধ হয়ে যায় এবং শুধুমাত্র পেনশনের উপর নির্ভর করা কঠিন হতে পারে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আর্থিক পরিকল্পনা এখন একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া অবসর জীবনে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হতে পারে। তাই, অবসরের জন্য সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আপনাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে না হয়। প্রত্যেকের আর্থিক চাহিদা ভিন্ন হলেও, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবসর পরিকল্পনা শুরু করা উচিত, কারণ এতে চক্রবৃদ্ধি সুদের সুবিধা পাওয়া যায়। এখানে পাঁচটি শীর্ষ বিনিয়োগ বিকল্প উল্লেখ করা হল, যা আপনার অবসর পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।

১. ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)
ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) হল সরকার সমর্থিত একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা, যেখানে আপনি ইকুইটি, ঋণপত্র বা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই স্কিমে আপনি কর্মজীবনের সময় আয়ের একটি অংশ নিয়মিত সঞ্চয় করেন, যা অবসর গ্রহণের পর নিয়মিত আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। এনপিএস-এ বিনিয়োগের জন্য আপনাকে মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে হবে। সময়ের সঙ্গে এই অর্থ বৃদ্ধি পায় এবং অবসর গ্রহণের সময় আপনি মোট জমার ৬০ শতাংশ এককালীন উত্তোলন করতে পারেন, বাকি ৪০ শতাংশ দিয়ে অ্যানুইটি কিনতে হবে, যা নিয়মিত আয় প্রদান করে। এনপিএস নিরাপদ এবং নমনীয় বিনিয়োগ বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়।

   

২. মিউচুয়াল ফান্ড
মিউচুয়াল ফান্ড অবসর পরিকল্পনার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিনিয়োগ বিকল্প। এটি আপনাকে সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান (এসডব্লিউপি) এর মাধ্যমে নিয়মিত মাসিক আয় প্রদান করতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত বছরে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ রিটার্ন দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি অবসর গ্রহণের সময় মিউচুয়াল ফান্ডে ৩০ লক্ষ টাকা জমা করে থাকেন, তবে এসডব্লিউপি-এর মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। বাকি অর্থের উপর আপনি সুদ অর্জন করতে থাকবেন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড বা হাইব্রিড ফান্ড বেছে নেওয়া উপযুক্ত হতে পারে।

৩. বীমা
অবসর গ্রহণের পর চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর জন্য স্বাস্থ্য বীমা একটি অপরিহার্য বিনিয়োগ। নিয়মিত আয় না থাকলে একটি ভালো স্বাস্থ্য বীমা পলিসি আপনার অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা এবং হাসপাতালের বিল পরিশোধে সহায়তা করতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণ করা উচিত, কারণ কম প্রিমিয়ামে বেশি কভারেজ পাওয়া যায়। বর্তমানে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বিশেষ বীমা পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলিতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, গুরুতর অসুস্থতার কভারেজ এবং আজীবন নবায়নের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। এই বীমা আপনার অবসরের সঞ্চয়কে চিকিৎসা ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে।

৪. ব্যাঙ্ক ডিপোজিট: আরডি এবং এফডি
ব্যাঙ্ক ডিপোজিট অবসর পরিকল্পনার জন্য একটি নিরাপদ এবং ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগ বিকল্প। আপনি রেকারিং ডিপোজিট (আরডি) বা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) বেছে নিতে পারেন। যদি আপনি প্রতি মাসে অল্প পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে চান, তবে আরডি উপযুক্ত, কারণ এটি সাধারণ সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের তুলনায় বেশি সুদ দেয়। অন্যদিকে, যদি আপনার কাছে ৫ লক্ষ টাকার মতো এককালীন অর্থ থাকে, তবে এফডি-তে বিনিয়োগ করা ভালো, কারণ এটি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের তুলনায় উচ্চ সুদ প্রদান করে। ব্যাঙ্ক ডিপোজিট আপনার অর্থ নিরাপদে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং অবসরের সময় দৈনন্দিন খরচ, চিকিৎসা ব্যয় বা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করা যায়।

Advertisements

৫. পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ)
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) হল সরকার সমর্থিত একটি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পনা, যা নিশ্চিত রিটার্ন প্রদান করে। এই স্কিমে আপনাকে প্রতি বছর ন্যূনতম ৫০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করতে হবে। পিপিএফ-এর লক-ইন পিরিয়ড ১৫ বছর এবং বর্তমানে এটি বছরে ৭.৬ শতাংশ হারে রিটার্ন দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ৪০ বছর বয়সে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা জমা করেন, তবে ১৫ বছর পর আপনার অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৭ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা জমা হবে। এই অর্থ করমুক্ত এবং অবসরের খরচ মেটানোর জন্য ব্যবহার করা যায়। পিপিএফ নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে জনপ্রিয়।

অবসর পরিকল্পনার গুরুত্ব
অবসর পরিকল্পনা শুধু আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে না, বরং আপনাকে মানসিক শান্তি দেয়। মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অবসর জীবনে শুধুমাত্র পেনশনের উপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, তরুণ বয়স থেকেই বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। চক্রবৃদ্ধি সুদের সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে আপনার সঞ্চয়কে বাড়িয়ে তুলবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ৩০ বছর বয়সে মাসে ৫,০০০ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ শুরু করেন, তবে ৬০ বছর বয়সে ১২ শতাংশ রিটার্ন ধরে আপনার সঞ্চয় ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত টিপস
অবসর পরিকল্পনার জন্য বিনিয়োগ বেছে নেওয়ার সময় আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা, আর্থিক লক্ষ্য এবং সময়সীমা বিবেচনা করুন। ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড এবং এনপিএস দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রিটার্ন দিতে পারে, তবে এতে বাজারের ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে, পিপিএফ এবং ব্যাঙ্ক ডিপোজিট নিরাপদ কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম রিটার্ন দেয়। তাই, আপনার পোর্টফোলিওতে ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিরাপদ বিনিয়োগের মিশ্রণ থাকা উচিত। এছাড়া, একজন আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

অবসর পরিকল্পনা হল আর্থিক স্বাধীনতা এবং মানসিক শান্তির চাবিকাঠি। এনপিএস, মিউচুয়াল ফান্ড, স্বাস্থ্য বীমা, ব্যাঙ্ক ডিপোজিট এবং পিপিএফ-এর মতো বিনিয়োগ বিকল্পগুলি আপনাকে অবসর জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। তরুণ বয়স থেকে ছোট পরিমাণে বিনিয়োগ শুরু করলে চক্রবৃদ্ধি সুদের সুবিধা আপনার সঞ্চয়কে বাড়িয়ে তুলবে। সঠিক পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে আপনি একটি নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় অবসর জীবন নিশ্চিত করতে পারেন। তাই, আজই আপনার অবসর পরিকল্পনা শুরু করুন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকুন।