শনিবার সকালে পাকিস্তানি গণমাধ্যম জানায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (shehbaz) দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ী ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ) এর একটি বৈঠক ডেকেছেন। তবে, কয়েক ঘণ্টা পরেই পাকিস্তানের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণা প্রত্যাহার করে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জোর দিয়ে বলেন, এনসিএ-র কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি।
আকর্ষণীয়ভাবে, এই প্রত্যাহার ঘটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে টেলিফোনিক আলোচনার পর। রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা বলেন। নিজেদের হাত পরিষ্কার রাখতে আসিফ সংবাদ মাধ্যমকে আরও বলেন, পারমাণবিক বিকল্প এখন টেবিলে নেই, তবে পরিস্থিতি যদি এমন হয়, তবে “পর্যবেক্ষকরাও” প্রভাবিত হবে।
আসিফ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমি বিশ্বকে বলছি, এটি কেবল এই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি আরও ব্যাপক ধ্বংসের কারণ হতে পারে। ভারত যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, তাতে আমাদের বিকল্পগুলি কমে যাচ্ছে।” পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (shehbaz) বর্তমান সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও টেলিফোনিক আলোচনা করেছেন।
পাকিস্তান প্রায়ই ভারতের সঙ্গে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক বিকল্পকে একটি লিভারেজ হিসেবে ব্যবহার করেছে। সম্প্রতি শেহবাজ শরিফ (shehbaz) জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের উপর একাধিক আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের পর ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকর প্রতিক্রিয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে।
বিক্রম মিশ্রি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন
শনিবার নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের পদক্ষেপগুলি “উসকানিমূলক” এবং “উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী”। তিনি পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের প্রমাণ উপস্থাপন করেন এবং পাকিস্তানের ছড়ানো মিথ্যার পর্দাফাশ করেন। মিশ্রি বলেন, “পাকিস্তানের পদক্ষেপগুলি উসকানি এবং উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী।
ভারত দায়িত্বশীল এবং সংযতভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে
এর জবাবে ভারত দায়িত্বশীল এবং সংযতভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।” পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী শনিবার পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত সুবিধা, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, রাডার সাইট এবং গোলাবারুদ সংরক্ষণাগার।
ভারতীয় যুদ্ধবিমান থেকে বায়ু-প্রক্ষেপিত অস্ত্র ব্যবহার করে রাফিকি, মুরিদ, চকলালা, রহিম ইয়ার খান, সুক্কুর এবং চুনিয়ানে পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানা হয়। এছাড়াও, পাসরুর এবং সিয়ালকোটের বিমান ঘাঁটির রাডার সাইটগুলিও লক্ষ্য করা হয়। এই সংঘাতের পটভূমিতে পাকিস্তানের এনসিএ বৈঠকের প্রাথমিক ঘোষণা এবং পরবর্তী প্রত্যাহার উল্লেখযোগ্য।
শেহবাজ শরিফ এনসিএ-র বৈঠক ডেকেছেন (shehbaz)
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল যে শেহবাজ শরিফ (shehbaz) এনসিএ-র বৈঠক ডেকেছেন, যা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার পর এই ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক চাপের ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে (shehbaz)। রুবিও ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত হামলা থামালে আমরাও ভেবে দেখব, পাক বিদেশমন্ত্রীর গলায় ভিন্ন সুর
খাজা আসিফের বক্তব্য
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের বক্তব্য এই সংঘাতের বিশ্বব্যাপী প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, এই সংঘাত শুধু এই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তিনি ভারতের পদক্ষেপকে দায়ী করে বলেন, এটি পাকিস্তানের বিকল্পগুলিকে সীমিত করছে। তবে, তিনি পারমাণবিক বিকল্পকে এখনই বাতিল করে দিয়ে এটিকে “দূরবর্তী সম্ভাবনা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির বক্তব্যে পাকিস্তানের উসকানিমূলক পদক্ষেপের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। তিনি জানান, পাকিস্তান বিভিন্নভাবে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ড্রোন এবং মিসাইল হামলার চেষ্টা। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই হামলাগুলো সফলভাবে প্রতিহত করেছে এবং প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলিতে নির্ভুল আঘাত হেনেছে। মিশ্রি জোর দিয়ে বলেন, ভারতের প্রতিক্রিয়া সংযত এবং দায়িত্বশীল ছিল।
এই সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের সমর্থনে পরিচালিত পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়। এই হামলার জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়। এরপর পাকিস্তান শুক্রবার ও শনিবার ভারতের বিভিন্ন শহর ও সামরিক স্থাপনায় ড্রোন ও মিসাইল হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ব্যর্থ করা হয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও ছাড়াও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সংঘাতের বিশ্বব্যাপী প্রভাবের আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন সহ বিশ্ব শক্তিগুলি শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।
পাকিস্তানের এনসিএ বৈঠকের ঘোষণা এবং প্রত্যাহার এই সংঘাতের জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাব তুলে ধরে। শেহবাজ শরিফের (shehbaz) পারমাণবিক সক্ষমতার উল্লেখ এবং আসিফের পরবর্তী বক্তব্য পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, ভারতের দায়িত্বশীল প্রতিক্রিয়া এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ এই সংঘাতে তার শক্তিশালী অবস্থান প্রকাশ করে।
এই উত্তেজনা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এই সংকট সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকির ইঙ্গিত এই সংঘাতের গুরুতরতা তুলে ধরে। আগামী দিনে উভয় দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ এই সংঘাতের গতিপথ নির্ধারণ করবে।