পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে (আইবি) ভারতীয় শহরগুলোতে ড্রোন হামলার (Drone Strikes) প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সেনাবাহিনী জম্মু সেক্টরে কঠোরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। প্রতিরক্ষা সূত্রকে উদ্ধৃতি করে এএনআই এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এই ঘটনা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে, যা গত ২২ এপ্রিল পাহালগামে ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনার পর থেকে নতুন মাত্রা পেয়েছে।
প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে হামলার চেষ্টা করেছে, যার মধ্যে বেসামরিক এলাকা এবং সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য ছিল। এই ড্রোনগুলোর মধ্যে অনেকগুলো তুরস্কের তৈরি আসিসগার্ড সোঙ্গার মডেল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাইনেটিক এবং নন-কাইনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এই ড্রোনগুলোর বেশ কয়েকটি গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এছাড়াও, পাকিস্তানের ভারী ক্যালিবার অস্ত্র দিয়ে এলওসি বরাবর গুলি চালানোর ঘটনাও রিপোর্ট করা হয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত দৃঢ় এবং সমন্বিত। জম্মু সেক্টরে সেনাবাহিনী পাকিস্তানের হামলার জবাবে আর্টিলারি এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করছে। এই প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক নয়, পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার জন্যও পরিচালিত হচ্ছে যে ভারত যেকোনো আগ্রাসনের জবাব কঠোরভাবে দেবে। এই ঘটনার পটভূমিতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ উল্লেখযোগ্য, যেখানে বুধবার ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান এবং পিওকে-তে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়। এই হামলায় ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্যবহৃত হয়েছে বলে পাকিস্তান দাবি করেছে।
পাকিস্তানের ড্রোন হামলার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। তবে, ভারতের এস-৪০০ বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল সিস্টেম এবং উন্নত রাডার ব্যবস্থা এই হামলাগুলো ব্যর্থ করেছে। প্রতিরক্ষা সূত্র জানায়, ভারতীয় সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
এই সংঘাতের প্রভাব সীমান্ত অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জম্মু, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধের ফলে ৪৩০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে, সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে, একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের হামলাকে ব্যর্থ করে আমাদের গর্ব বাড়িয়েছে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘাতের দ্রুত ডি-এস্কেলেশনের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাত বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক।” তবে, ভারত দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে তুলে ধরে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা নয়, বরং পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে ভারত সন্ত্রাসবাদ বা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো আপস করবে না