ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে যে, ভারতের কঠোর সামরিক ও কূটনৈতিক চাপের মুখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (imran-khan) শেহবাজ শরীফের বর্তমানে কোনো খোঁজ নেই।
এবং এই শূন্যতার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (imran-khan) ক্ষমতায় ফিরে আসার গুঞ্জন তৈরি হচ্ছে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। এই প্রতিবেদনে এই গুঞ্জনের প্রেক্ষাপট এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করা হল।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ও শেহবাজের প্রস্থান
ভারতের অপারেশন সিঁদুর , যা ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ২৬ জনের প্রাণহানির জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। ভারত পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে নির্ভুল হামলা চালায়। এই অপারেশনে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়, যা পাকিস্তানের জন্য বড় ধাক্কা।
এরপর ৭-৮ মে রাতে পাকিস্তান ভারতের জম্মু ও রাজস্থানে ৩০০-৪০০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়, যা ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করে। ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলায় পাকিস্তানের লাহোরে বিমান প্রতিরক্ষা রাডার ধ্বংস হয়। এই ঘটনাবলী পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে।
এই প্রেক্ষাপটে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে শেহবাজ শরীফ হয়ত এই সংকটের মধ্যে দেশ ছেড়েছেন। একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, “শেহবাজ শরীফ কোনো বাঙ্কারে লুকিয়ে । এখন কে নেতৃত্ব দেবেন, এবং আবার ও কি ইমরান খানকে দেওয়া হবে পাকিস্তানের তখ্ত ।”
আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ইমরান খান জেলে, আর শেহবাজ শরীফ নিজের তশরিফ বাঁচাতে ঘুরছেন।” যদিও এই দাবিগুলো এখনও নিশ্চিত নয়, এগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
পুঞ্চ সেক্টরে ভারী গোলা বর্ষণ পাক সেনার
ইমরান খানের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা (imran-khan)
ইমরান খান, (imran-khan) পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা, ২০২২ সালে একটি অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। তারপর থেকে তিনি দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দি। তবে, তার জনপ্রিয়তা এবং পশতুন অধ্যুসিত খাইবার পাখতুনখোয়ার মতো অঞ্চলে সমর্থন এখনও শক্তিশালী। পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে, ইমরানের মুক্তি এবং ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঐতিহাসিকভাবে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সরকারের ব্যর্থতা এবং ভারতের সামরিক আধিপত্যের মুখে সেনাবাহিনী একটি নতুন নেতৃত্বের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ইমরান খান, (imran-khan) যিনি সেনাবাহিনীর সমর্থনে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন, আবারও তাদের পছন্দ হতে পারেন, বিশেষ করে জনগণের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতার কারণে।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট
পাকিস্তান বর্তমানে একাধিক সংকটের মুখোমুখি। খাইবার পাখতুনখোয়ায় পশতুন তহফুজ মুভমেন্ট (পিটিএম) এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো গোষ্ঠীগুলো সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পশতুনরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার দাবি তুলেছে, এবং কেউ কেউ ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। এই অস্থিরতা শেহবাজ শরীফের সরকারের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।
অর্থনৈতিকভাবেও পাকিস্তান সংকটে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক ঋণ এবং জ্বালানি সংকট দেশটির অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। শেহবাজ শরীফের সরকার এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে, যা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইমরান খানের (imran-khan) মতো একজন জনপ্রিয় নেতার প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য
ভারতের অপারেশন সিঁদুর এবং তার পরবর্তী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কোয়াত্রা এবং যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছেন। কোয়াত্রা বলেছেন, “পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ সমর্থনই বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের বিষয়।” দোরাইস্বামী পাকিস্তানকে জঙ্গি পরিকাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য “প্রস্থান পথ” গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতের এই কূটনৈতিক আক্রমণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে আরও প্রকট করেছে। পাকিস্তানের অস্বীকৃতি এবং উত্তেজনা বাড়ানোর প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন হারাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বের ব্যর্থতা তাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করেছে।
ইমরান খানের সম্ভাব্য ভূমিকা
ইমরান খানের (imran-khan) প্রত্যাবর্তন নির্ভর করছে সেনাবাহিনীর সমর্থন এবং রাজনৈতিক সমীকরণের উপর। তিনি যদি গদি পান, তবে তিনি পশতুন জনগোষ্ঠী এবং তার তরুণ সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার সুবিধা নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারেন। তবে, তার পূর্ববর্তী শাসনকালে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শেহবাজ শরীফের দেশত্যাগ এবং ইমরান খানের ক্ষমতায় ফিরে আসার গুঞ্জন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক সংকটের প্রতিফলন। ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক আধিপত্য এই সংকটকে আরও তীব্র করেছে। যদিও এই দাবিগুলো এখনও নিশ্চিত নয়, তবে এগুলো পাকিস্তানের অস্থির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে।
ইমরান খানের (imran-khan) প্রত্যাবর্তন সম্ভব হলে তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তির আহ্বান এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ বন্ধের প্রতিশ্রুতি এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।