Operation Sindoor: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার জেরে উত্তর, পশ্চিম এবং মধ্য ভারতের ২৭টি বিমানবন্দর শনিবার (১০ মে) সকাল ৫:২৯ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে বিমান ভ্রমণে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলো ৪৩০টি ফ্লাইট বাতিল করেছে, যা দেশের মোট নির্ধারিত ফ্লাইটের প্রায় ৩ শতাংশ। যাত্রীদের তাদের ফ্লাইটের স্থিতি এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, পাকিস্তানি এয়ারলাইনগুলোও ১৪৭টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে, যা তাদের দৈনিক বিমান চলাচলের প্রায় ১৭ শতাংশ।
গ্লোবাল ফ্লাইট ট্র্যাকিং পরিষেবা ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় করিডোর, কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত, বেসামরিক বিমানের জন্য প্রায় সম্পূর্ণ শূন্য ছিল। এয়ারলাইনগুলো এই সংবেদনশীল অঞ্চল এড়িয়ে চলায় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের আকাশপথে কোনো বেসামরিক বিমান চলাচল করেনি। উল্লেখযোগ্যভাবে, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ভারতের জম্মু, পাঞ্জাব এবং রাজস্থান রাজ্যের সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ড্রোন এবং মিসাইল হামলা চালানোর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে।
ভারতে বন্ধ বিমানবন্দরের সম্পূর্ণ তালিকা
বন্ধ ঘোষিত ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রয়েছে:
শ্রীনগর, জম্মু, লেহ, চণ্ডীগড়, আমৃতসর, লুধিয়ানা, পাটিয়ালা, ভাটিন্ডা, হালওয়ারা, পাঠানকোট, ভুন্টার, শিমলা, গাগ্গাল, ধর্মশালা, কিশানগড়, জয়সলমের, যোধপুর, বিকানের, মুন্দ্রা, জামনগর, রাজকোট, পোরবন্দর, কান্ডলা, কেশোদ, ভুজ, গোয়ালিয়র, হিন্ডন।
প্রাথমিকভাবে সামরিক চার্টার অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলোও এই বন্ধের আওতায় এসেছে। এই ঘটনার প্রভাব আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকান এয়ারলাইনস তার দিল্লি-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট বাতিল করেছে, যা ক্রমবর্ধমান সংঘাতের বিশ্বব্যাপী প্রভাবকে তুলে ধরে।
এয়ারলাইনগুলোর ভ্রমণ পরামর্শ
ভারতে পরিচালিত এয়ারলাইনগুলো যাত্রীদের জন্য পরামর্শ জারি করেছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে যাত্রীদের ফ্লাইটের সময়ের তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো উচিত। এয়ার ইন্ডিয়ার পরামর্শে বলা হয়েছে, ব্যুরো অব সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটির নির্দেশ অনুযায়ী বিমানবন্দরে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে, দেশজুড়ে যাত্রীদের চেক-ইন এবং বোর্ডিংয়ের জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া উচিত। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ফ্লাইট ছাড়ার ৭৫ মিনিট আগে চেক-ইন বন্ধ হবে।
আকাশা এয়ারও একই ধরনের পরামর্শ জারি করেছে। এক্স পোস্টে আকাশা এয়ার জানিয়েছে, ভারতের সব বিমানবন্দরে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে যাত্রীদের ফ্লাইট ছাড়ার কথা অন্তত তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি মসৃণ চেক-ইন এবং বোর্ডিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। এয়ারলাইনটি বিমানবন্দরে প্রবেশের জন্য বৈধ সরকার-অনুমোদিত ছবিসহ পরিচয়পত্র বহনের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। এছাড়াও, চেক-ইন লাগেজ ছাড়াও যাত্রীদের শুধুমাত্র একটি হ্যান্ডব্যাগ (৭ কেজি পর্যন্ত) বহনের অনুমতি দেওয়া হবে। সমস্ত যাত্রীদের বোর্ডিংয়ের আগে দ্বিতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
ইন্ডিগো এয়ারলাইনস ঘোষণা করেছে যে এই অসাধারণ সময়ে সব বিমানবন্দরে উচ্চতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এয়ারলাইনটি ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং আনুষ্ঠানিকতার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এবং তাদের বোঝাপড়া ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) এবং উত্তেজনার পটভূমি
অপারেশন সিঁদুর ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নির্ভুল হামলা, যা ২২ এপ্রিল পাহালগামে ২৬ জনের মৃত্যুর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছিল। এই হামলায় জয়শে-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করা হয়েছিল। বুধবার ভোরে শুরু হওয়া এই অভিযানের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। পাকিস্তান এই হামলার জবাবে বৃহস্পতিবার ভারতের সামরিক স্থাপনাগুলোতে ড্রোন এবং মিসাইল হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ব্যর্থ করা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রভাব
এই উত্তেজনার ফলে পাকিস্তান তার লাহোর এবং ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে সমস্ত বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলো, যেমন এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, লুফথানসা এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, পাকিস্তানের আকাশপথ এড়িয়ে ফ্লাইট রুট পরিবর্তন করেছে, যার ফলে ফ্লাইটের সময় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের বিশ্বব্যাপী প্রভাবকে তুলে ধরে।
অপারেশন সিঁদুর এবং এর পরবর্তী ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বিমান চলাচলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ এবং ৪৩০টির বেশি ফ্লাইট বাতিলের ফলে যাত্রীদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটছে। এয়ারলাইনগুলো যাত্রীদের সুবিধার জন্য পুনঃনির্ধারণ এবং ফেরতের ব্যবস্থা করছে। তবে, এই সংকট কবে নিরসন হবে তা এখনও অনিশ্চিত। যাত্রীদের এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা সামঞ্জস্য করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।