কোয়েটা দখল বালোচ বিদ্রোহীদের, পালিয়েছে পাকিস্তানি সেনা

বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (Balochistan Liberation Army) দাবি করেছে যে তাদের যোদ্ধারা (Baloch Rebels) পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা দখল করেছে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এই অঞ্চল…

Baloch Rebels Claim Control of Quetta, Launch Series of Attacks Against Pakistani Forces

বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (Balochistan Liberation Army) দাবি করেছে যে তাদের যোদ্ধারা (Baloch Rebels) পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা দখল করেছে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করেছে। এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন পাকিস্তান একাধিক ফ্রন্টে চাপের মুখে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ানোর পাশাপাশি বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের আক্রমণ পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। ভারত ৮ ও ৯ মে মধ্যরাতে আমৃতসর, জালন্ধর, জয়সলমের, উধমপুরসহ একাধিক শহরের উপর পাকিস্তানের ড্রোন এবং মিসাইল হামলার চেষ্টা সফলভাবে ব্যর্থ করেছে। এরই মধ্যে বালুচ যোদ্ধারা কোয়েটায় নতুন ফ্রন্ট খুলেছে।

বালুচিস্তানে উত্তেজনা চরমে উঠেছে যখন বালুচ যোদ্ধারা কোয়েটার ফ্রন্টিয়ার কর্পস সদর দপ্তরে আক্রমণ চালায়। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএলএ যোদ্ধারা কোয়েটা দখল করেছে এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে শহর থেকে বিতাড়িত করেছে। কোয়েটার কামব্রানি রোডের জঙ্গল বাগ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন সফর খান চেকপোস্টে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হামলা চালায়, যেখানে অন্তত দুটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও, কোয়েটার হাজারা টাউন এবং কিরানি রোডে পাকিস্তানি বাহিনীর পোস্টে সশস্ত্র ব্যক্তিরোহামলা চালায়, যেখানে একাধিক বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

   

বিএলএ যোদ্ধারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কেচ, মাসতুং এবং কাচ্ছি জেলায় ছয়টি পৃথক হামলায় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের লক্ষ্য করেছে। এই হামলাগুলোতে রিমোট-কন্ট্রোল্ড ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এবং সরাসরি সশস্ত্র অভিযান জড়িত ছিল, যা পাকিস্তানি বাহিনীর সরবরাহ লাইন এবং যোগাযোগ টাওয়ারের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। গতকাল সকাল ৯টায়, বিএলএ যোদ্ধারা জামারানের দশতাক এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের উপর রিমোট-কন্ট্রোল্ড আইইডি হামলা চালায়, যার ফলে একজন সেনা সদস্য তৎক্ষণাৎ নিহত হয়। আজ, বিএলএ যোদ্ধারা জামারানের কাটগান এলাকায় পাকিস্তানি চেকপোস্টে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়, যার ফলে বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়। এছাড়াও, জামারানের সাহ দিম এলাকায় আরেকটি চেকপোস্টে স্বয়ংক্রিয় এবং ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়, যেখানে গ্রেনেড লঞ্চার ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়। এই হামলায় অন্তত দুজন সেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে।

গতকাল বিকেলে, বিএলএ যোদ্ধারা সাহ দিম এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে সরবরাহ বহনকারী একটি ট্রাকের উপর রিমোট-কন্ট্রোল্ড আইইডি হামলা চালায়, যার ফলে ট্রাকটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। বিএলএ-র ধারাবাহিক হামলার কারণে পাকিস্তানি বাহিনী বিকল্প উপায়ে তাদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে। তারা জামারান এবং তিগ্রান এলাকায় স্থানীয় ব্যক্তিদের ব্যবসায়িক সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের অপারেশনে সহায়তা করতে বাধ্য করছে। বিএলএ পূর্বে স্পষ্ট করেছে যে স্থানীয়দের অবশ্যই দখলদার বাহিনীকে কোনো ধরনের সরবরাহ বা সহায়তা থেকে বিরত থাকতে হবে, নতুবা তারা নিজেদের জীবন এবং সম্পত্তির জন্য দায়ী থাকবে।

আজ, বিএলএ যোদ্ধারা মাসতুংয়ের চোতু এলাকায় বালুচ সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত যানবাহনের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে যানবাহনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও, কাচ্ছির হাজি শাহর এলাকায় ইউফোন কোম্পানির একটি যোগাযোগ টাওয়ারের উপর হামলা চালিয়ে এর যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়। বিএলএ মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ জানিয়েছেন, বালুচ ন্যাশনাল আর্মি এবং বিএলএ এই সমস্ত হামলার দায় স্বীকার করেছে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

পাকিস্তানের এই অভ্যন্তরীণ সংকট এমন এক সময়ে তীব্র হচ্ছে যখন ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। পাহালগামে ২২ এপ্রিল ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তান ৮ মে রাতে ভারতের একাধিক শহরে ড্রোন এবং মিসাইল হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতের এস-৪০০ সুদর্শন চক্র এবং ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড ব্যর্থ করে দেয়। ভারত পাকিস্তানের লাহোর, মুলতান, সারগোধা এবং ফয়সালাবাদে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং করাচি বন্দরে ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে।

বালুচিস্তানের সংকট এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব

বালুচিস্তানে বিএলএ-র এই আক্রমণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার উপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। বালুচ বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে পাকিস্তান সরকার তাদের প্রদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে, যখন স্থানীয় জনগণ দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পগুলো, বিশেষ করে গোয়াদর বন্দর, বালুচ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। বিএলএ এই প্রকল্পগুলোকে পাকিস্তানের শোষণের প্রতীক হিসেবে দেখে এবং চীনা নাগরিকদের উপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই উত্তেজনার দিকে নজর রাখছে। জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা এবং ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বালুচিস্তানে বিএলএ-র কোয়েটা দখল এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিতাড়ন পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুতর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা এবং বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের আক্রমণ পাকিস্তানকে একাধিক ফ্রন্টে দুর্বল করে দিয়েছে। বালুচ জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অভিযোগের সমাধান না হলে এই সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। বর্তমানে, পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে এই সংকট মোকাবিলার পরবর্তী পদক্ষেপ।

Advertisements