জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর (srinagar) বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, শ্রীনগর (srinagar) বিমানবন্দরের দিকে ড্রোন নির্দেশিত হতে পারে। এই সতর্কতার পর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি সক্রিয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে, রাজস্থানের জয়সলমীরে ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানি ড্রোন প্রতিহত করেছে।
এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আকাশে ঝলকানি দেখা গেছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী জয়সলমীর সেনা সদর দপ্তরে পাকিস্তানের হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা অপারেশন সিঁদুরের পর আরও তীব্র হয়েছে।
শ্রীনগর বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা (srinagar)
শ্রীনগর (srinagar) বিমানবন্দর, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) নিয়ন্ত্রণাধীন একটি উচ্চ নিরাপত্তা অঞ্চল, বর্তমানে সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী বা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ড্রোন ব্যবহার করে বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা করতে পারে।
এই হুমকির প্রেক্ষিতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যার মধ্যে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ ত্রিউমফ এবং দেশীয় আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে, সক্রিয় করা হয়েছে। শ্রীনগর বিমানবন্দরে সব বেসামরিক উড়ান বন্ধ রয়েছে, এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) ৬-৭ মে রাতে জেএফ-১৭ নেতৃত্বাধীন একটি হামলায় শ্রীনগর (srinagar) বিমানবন্দরের রানওয়ে লক্ষ্য করেছিল। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি, এটি বিমানবন্দরে সতর্কতা বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ধরনের দাবি অস্বীকার করেছে, তবে রানওয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জয়সলমীরে পাকিস্তানি ড্রোন প্রতিহত
রাজস্থানের জয়সলমীরে ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি পাকিস্তানি ড্রোনকে ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে প্রতিহত করেছে। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড্রোনটি ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করছিল, যা জয়সলমের সেনা সদর দপ্তরকে লক্ষ্য করতে পারে। ড্রোনটি ধ্বংস করার সময় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং আকাশে আলোর ঝলকানি দেখা যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনী এই হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়, এবং কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জয়সলমীরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, এবং স্থানীয় প্রশাসন রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করেছে। ড্রোন ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাঞ্জাবের অমৃতসরে বুধবার রাতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, এবং তিনটি গ্রামে রকেটের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যা পাকিস্তান থেকে নিক্ষিপ্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বায়ু সেনার আক্রমণে ধ্বংস পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, নিহত পাইলট
অপারেশন সিঁদুর প্রেক্ষাপট
এই ঘটনাগুলো ভারতের অপারেশন সিঁদুর এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটেছে, যেখানে ৭ মে ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই অভিযান ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়। অপারেশনে জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়, এবং ১০০ জনেরও বেশি জঙ্গি নিহত হয়।
পাকিস্তান এই হামলার জবাবে ৭-৮ মে রাতে শ্রীনগর, জম্মু, অমৃতসর, জলন্ধর, লুধিয়ানা, জয়সলমের সহ ১৫টি শহরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করে। ভারতের এস-৪০০ এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই হামলা প্রতিহত করে। ভারত পাল্টা হামলায় লাহোরে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদন্ত
শ্রীনগর (srinagar) এবং জয়সলমীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী যৌথভাবে ড্রোন হামলার তদন্ত করছে। জয়সলমেরে ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা পাকিস্তানের আক্রমণের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সীমান্তে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
জনজীবনে প্রভাব
শ্রীনগর (srinagar) বিমানবন্দরে বেসামরিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় যাত্রীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। জয়সলমের এবং পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্ল্যাকআউটের কারণে জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং পুলিশ ও প্রশাসনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চীন উভয় দেশকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। লাহোরে মার্কিন কনস্যুলেট তাদের কর্মীদের নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
শ্রীনগর (srinagar) বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা এবং জয়সলমীরে পাকিস্তানি ড্রোন প্রতিহত করা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি প্রদর্শন করে। তবে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা এবং উভয় দেশের সংযম এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ।