Price Hike Concerns Amid War Tension: যুদ্ধ শুধু সীমান্তে গুলি চালানোর বিষয় নয়, এর প্রভাব সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পড়ে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বাড়লে তার প্রভাব শুধু রাজনীতি বা কূটনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এর আর্থিক প্রতিফলন ঘটে বাজারে। খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, যাদের আয় সীমিত এবং ব্যয়ের প্রতিটি খাত হিসেব করে পরিচালনা করতে হয়।
যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মজুতদারিতে লিপ্ত হন। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। যেমন ২০১৯ সালে বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পর সীমান্তে উত্তেজনার সময় বিভিন্ন রাজ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু ও ডিজেলের দামে উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল। এতে একদিকে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠে যায়, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ অবৈধভাবে বিপুল মুনাফা অর্জন করে।
এই পরিস্থিতি রুখতে প্রয়োজন কার্যকরী প্রশাসনিক তৎপরতা। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান মধ্যে সম্ভাব্য উত্তেজনার ইঙ্গিতে একাধিক রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, যাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয় এবং কোন পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে। পাশাপাশি জেলাগুলিতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে, যারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। কোথাও পণ্য মজুত বা কালোবাজারির খবর পাওয়া মাত্রই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও, সরকার জনসচেতনতা বাড়াতেও উদ্যোগ নিচ্ছে। সংবাদপত্র, টিভি ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে যে, আতঙ্কিত হয়ে পণ্য মজুত না করতে। এতে সাধারণ মানুষও সতর্ক থাকছেন এবং গুজবে কান দিচ্ছেন না। প্রশাসন খাদ্যপণ্য পরিবহণ ও সরবরাহ চেইন যাতে বাধাহীনভাবে চলে, তা নিশ্চিত করতে পরিবহণ বিভাগের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
এমন সংকটময় সময়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে অতিরিক্ত পণ্য সরবরাহ, ট্রাক চলাচলের অনুমতি এবং বাজারে ভ্রাম্যমাণ দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে।
যুদ্ধ এক ভয়াবহ বাস্তবতা হলেও, তার ছায়াতলে গড়ে ওঠা কালোবাজারি ও মুনাফাখোর চক্র এক নতুন ধরনের যুদ্ধ তৈরি করে—যেখানে শিকার হয় সাধারণ মানুষ। তাই শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়, সমাজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা এই ‘অদৃশ্য শত্রুদের’ বিরুদ্ধেও প্রশাসনের তৎপরতা জরুরি। যুদ্ধ যেন শুধু ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষে সীমাবদ্ধ থাকে, নাগরিক জীবনের উপর তার প্রভাব যেন নিয়ন্ত্রিত রাখা যায়—সেই লক্ষ্যেই রাজ্য প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।