ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা থামাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট…

US President Donald Trump Offers Mediation as India-Pakistan Tensions Rise

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। ভারতের হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, “এটা খুবই ভয়ানক। আমি দুই দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখি। আমি দুই দেশকেই খুব ভালো করে জানি। আমি চাই তারা এই সমস্যার সমাধান করুক, আমি চাই তারা এটি বন্ধ করুক। আশা করি, তারা এখনই থামবে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের দুই দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যদি আমি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, আমি সেখানে থাকব।”

Operation Sindoor এবং তার পটভূমি

ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ৭ মে, ২০২৫-এ ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি নির্ভুল হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি। এই হামলা ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলা “ফোকাসড, পরিমিত এবং অ-উত্তেজনামূলক” ছিল, এবং কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি। হামলায় জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে বাহাওয়ালপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও ছিল।

   

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এই হামলায় ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তবে ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তানের পাল্টা গোলাবর্ষণে আটজন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেছেন, ভারত ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে, এবং এর জবাব তারা “নিজেদের সময় ও জায়গা বেছে নিয়ে” দেবে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব

ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস রয়েছে, এবং তিনি আশা করেন এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান হবে। তিনি এও বলেছেন যে, তিনি উভয় দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং প্রয়োজনে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে, ভারত ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রশাসনের একটি অনুরূপ প্রস্তাব ভারত প্রত্যাখ্যান করেছিল, জানিয়েছিল যে, এই সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা উচিত।

মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিওও এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের পাশাপাশি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানও উভয় দেশকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে বলেছেন, “জঙ্গিদের জানা উচিত, তাদের জঘন্য অপরাধ থেকে লুকানোর কোনো জায়গা নেই।”

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভারতের নাগরিকরা সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন, অনেকে এই হামলাকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর নীতির প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। তবে, কিছু ব্যবহারকারী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই হামলা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারতের অবস্থান

ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী জানিয়েছেন, পাকিস্তান পহেলগাঁও হামলার পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভারতকে এই হামলা চালাতে বাধ্য হতে হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২৯ এপ্রিল একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যার ফলে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়।

অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতির একটি শক্তিশালী প্রমাণ। ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব সত্ত্বেও, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্যা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করতে হবে। পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এবং সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ভারতের কৌশলগত প্রস্তুতির উপর নির্ভর করবে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন দক্ষিণ এশিয়ার দিকে, যেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Advertisements