ভারত পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) পরিচালনা করার পর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে একটি ‘পাঁচ শব্দের’ বার্তা সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করেছেন। প্রাক্তন সেনাপ্রধান একটি গ্রাফিক চিত্র পোস্ট করেছেন, যাতে দুটি পরিস্থিতি চিত্রিত হয়েছে—পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং ভারতের জঙ্গি অবকাঠামোর ওপর আঘাতের পরবর্তী দৃশ্য।
প্রথম পরিস্থিতিতে, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার সময় একজন জঙ্গি শিকারকে বলছে, ‘মোদীকে বলো’। পরবর্তী দৃশ্যে, অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ধ্বংস করার পর ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, ‘আমি মোদীকে বলেছি’। এই গ্রাফিক চিত্রটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ব্যবহারকারীরা এটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন।
ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অধীনে নির্ভুল হামলা চালিয়েছে, যা জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পরে পরিচালিত হয়। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। অপারেশনের সময় কোনো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি বলে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে, বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী সাংবাদিকদের জানান, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পরিকল্পনাকারী এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি ছিল। তিনি আরও বলেন, ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে তাদের অধীনস্থ অঞ্চলে জঙ্গি অবকাঠামোর বিরুদ্ধে কোনো ‘প্রমাণযোগ্য’ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
Succinct. A whole story in five words. pic.twitter.com/7ySGav0bIQ
— Manoj Naravane (@ManojNaravane) May 7, 2025
Operation Sindoor: একটি দীর্ঘ যুদ্ধের প্রথম ধাপ
প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল নারাভানে তাঁর বিশ্লেষণে বলেছেন, অপারেশন সিঁদুর কোনো ‘শেষ’ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের প্রথম সালভো। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে, এবং ভারতকে এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাঁর স্পষ্টবাদিতা এবং কৌশলগত দূরদর্শিতার প্রশংসা করছেন।
অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতির একটি শক্তিশালী প্রমাণ। পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের দ্রুত এবং নির্ভুল প্রতিক্রিয়া বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, ভারত তার নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপস করবে না। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এই অপারেশনকে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর একটি উন্নত রূপ হিসেবে বর্ণনা করছেন, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার প্রতিফলন।
জনমত এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
নারাভানের শেয়ার করা গ্রাফিক চিত্রটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবহারকারীরা এটিকে ভারতের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। অনেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে পোস্ট করেছেন। এক্স-এর পোস্টগুলিতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবহারকারীরা এই অপারেশনকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করছেন।
কেউ কেউ অপারেশনের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, এটি কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা। তবে, কিছু ব্যবহারকারী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই হামলা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। নারাভানের বক্তব্য এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি ভারতকে পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
পহেলগাঁও হামলা এবং তার পটভূমি
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলা জম্মু ও কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড় ধরনের আঘাত হানে। হামলার পর পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি ঘাঁটি থেকে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার এই জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, যার ফলে ভারতকে স্ব-প্রতিরক্ষার জন্য এই হামলা চালাতে হয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির একটি প্রতিফলন। তবে, নারাভানের মতে, এটি একটি দীর্ঘ যুদ্ধের শুরু মাত্র। পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এবং সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ভারতের কৌশলগত প্রস্তুতির উপর নির্ভর করবে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এই অপারেশনকে ভারতের সামরিক শক্তি এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।
‘মোদীকে বলো, আমি মোদীকে বলেছি’—এই পাঁচ শব্দের বার্তা কেবল একটি সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট নয়, এটি ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, দেশের নিরাপত্তা এবং নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। প্রাক্তন সেনাপ্রধান নারাভানের এই বার্তা এবং তাঁর বিশ্লেষণ ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির উপর আলোকপাত করে।