ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) উজ্জ্বল নক্ষত্র তথা ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) প্ৰাক্তন ফুটবলার ডি.এম.কে. আফজাল (DMK Afzal) প্রয়াত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তাঁর প্রয়াণে ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্র এক অভিজ্ঞ, নিবেদিতপ্রাণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে হারাল।
ডিএমকে আফজাল ছিলেন ষাটের দশকের ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬২ সালে জাকার্তায় আয়োজিত এশিয়ান গেমসে। এই টুর্নামেন্টেই আফজাল ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাঁর অবদানে ভারত সোনা জয় করে। তাঁর অভিষেক ম্যাচ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বে। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর ম্যাচসংখ্যা সীমিত হলেও, প্রতিটি ম্যাচে তিনি নিজের দায়িত্ব ও দক্ষতার ছাপ রেখে গেছেন।
আফজালের ঘরোয়া ফুটবলে অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ১৯৬৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ দলের হয়ে সন্তোষ ট্রফি জেতেন। ক্লাব ফুটবলে আফজাল ছিলেন অন্ধ্র পুলিশ দলের এক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। এই দলের হয়েই তিনি ১৯৬১ সালে দুরান্ড কাপ, ১৯৬২ সালে রোভার্স কাপ (যৌথভাবে), এবং ১৯৬৫ সালে ডি.সি.এম ট্রফি জেতেন।
ভারতীয় এই ফুটবলারের সঙ্গে চার বছরের চুক্তি বাড়াল বেঙ্গালুরু
পরে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগ দেন। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে তাঁর সময়কাল ছিল অত্যন্ত গৌরবময়। তিনি ১৯৬৬ সালে কলকাতা ফুটবল লিগ ও আই.এফ.এ. শিল্ড জেতেন। ১৯৬৭ সালে রোভার্স কাপ ও ডুরান্ড কাপ এবং ১৯৬৮ সালে সাইত নাগজি ট্রফি, কেরালা এফ.এ. শিল্ড এবং বর্ডোলই ট্রফি জেতেন। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে তিনি ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে খেলেন। ১৯৬৮ সালে শিল্ড, ডুরান্ড ও রোভার্স কাপে তাঁর একটি করে গোল রয়েছে, যা দলের জন্য ছিল অমূল্য।
আফজালের খেলার ধরন ছিল নিখুঁত এবং দৃঢ়তাসম্পন্ন। একজন আদর্শ হাফ হিসেবে তিনি মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারতেন অসাধারণ দক্ষতায়। তাঁর পাসিং, পজিশনিং ও খেলার প্রতি নিবেদন তাঁকে সমসাময়িকদের মধ্যে স্বতন্ত্র করে তুলেছিল।
অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলা যায়, তিনি ছিলেন ১৯৬৬ সালের ইস্টবেঙ্গল দলের অংশ, যারা কলকাতা লিগ ও আই.এফ.এ. শিল্ড জিতেছিল। সেই ঐতিহাসিক ছবিতে একেবারে বাঁ দিকের সারিতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডি.এম.কে. আফজাল। আবার, ১৯৬৮ সালে কেরালা এফ.এ. শিল্ড জেতা ইস্টবেঙ্গল টিমের ছবিতে ডানদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি—এই দুটি মুহূর্ত আজও ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
ডি.এম.কে. আফজালের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেন, “ডি.এম.কে. আফজাল তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ছিলেন। ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা অতুলনীয়। আমি তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।”
আজকের ফুটবলারদের জন্য আফজালের জীবন ও কর্ম এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ফুটবল মাঠে তাঁর অবদান, সাফল্য ও স্পোর্টসম্যানশিপ দীর্ঘদিন স্মরণে থাকবে।