মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল (Ajit Doval ) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ( PM Narendra Modi) সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। এই বৈঠক পহেলগাঁওয়েে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠকের পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। সুত্রের খবর, তাঁদের দুু’জনের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা হয়েছে৷ মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কেই রণনীতি তৈরি করা হয়েছে এই বৈঠকে৷
পহেলগাঁওয়ে হামলার প্রেক্ষাপট
গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়েের বৈসরণ উপত্যকায় একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত দুই পাকিস্তানি জঙ্গি, আলি ভাই ও হাশিম মুসাকে দায়ী করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এই হামলার জন্য তিনজন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে মোট ৬০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ভারত সরকার এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেছে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিমধ্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” প্রদান করেছেন, যাতে তারা এই হামলার উপযুক্ত জবাব দিতে পারে।
ডোভাল-মোদী বৈঠকের তাৎপর্য
অজিত ডোভাল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বৈঠক জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডোভাল, যিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন, পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির জন্য পরিচিত। ২০১৬-এর উরি হামলা এবং ২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং এয়ার স্ট্রাইকের মতো পদক্ষেপে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই বৈঠকে পহেলগাঁওয়ে হামলার পরবর্তী কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী মোদী নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠি এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আমর প্রীত সিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে এই হামলার জবাব দেওয়ার জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। মোদী বলেছেন, “১৪০ কোটি ভারতীয়দের সঙ্গে গোটা বিশ্ব আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন করছে। আমি আক্রান্ত পরিবারগুলিকে আশ্বাস দিচ্ছি, তারা ন্যায় পাবে।” এই বৈঠকের পর ডোভালের সঙ্গে আলোচনা ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত শীঘ্রই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
পহেলগাঁওয়ে হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ভারত ইন্দাস জলচুক্তি থেকে পিছু হটেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া, সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলওয়ামা হামলার পর ভারত যেভাবে জৈশ-ই-মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল, তেমনই পহেলগাঁওয়ে হামলার পরও একই ধরনের পদক্ষেপের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত দেশজুড়ে সিভিল ডিফেন্স মক ড্রিল পরিচালনা করছে, যাতে জনগণ জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকে।
পহেলগাঁওয়ে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অজিত ডোভালের এই বৈঠক ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বৈঠক থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভারত সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তারা কোনো আপস করবে না। এই পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা এবং প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।