জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) বরাবর ফের উত্তেজনা। টানা ১২তম রাতেও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী (Pakistan Violates Ceasefire) ছোট অস্ত্র থেকে গুলি ছোঁড়ে ভারতের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায়। প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনা ‘সমানুপাতিক’ জবাব দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রবিবার (৫ মে) রাত থেকে সোমবার (৬ মে) ভোর পর্যন্ত পাক সেনারা বিনা প্ররোচনায় গুলি চালায় কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনূর সেক্টরে। ANI-কে উদ্ধৃত করে প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেন, “পাকিস্তানের তরফে ছোঁড়া গুলির উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে। আমাদের সেনারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায়।”
এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন শুরু হয়েছে ২৪ এপ্রিল থেকে, অর্থাৎ পাহালগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দু’দিন পর থেকে। সেই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ মানুষ। এরপর থেকেই ভারত-পাক উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
২৪ এপ্রিল ভারত সরকার ইন্দাস নদীচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা ভারতের বাণিজ্যিক বিমানের জন্য বন্ধ করে দেয়, ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পণ্য আদান-প্রদান বন্ধ করে এবং জল সঙ্কট ঘিরে হুঁশিয়ারি দেয় যে, “ভারতের জলবণ্টন হস্তক্ষেপ যুদ্ধ ঘোষণার সমান”।
এই টানা হামলা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর সবচেয়ে গুরুতর বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা। ওই সময় ভারত ও পাকিস্তান ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসরণে সম্মত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একাধিক সেক্টরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে, বাড়তে থাকা উত্তেজনা ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহলও। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) সোমবার এক ঘরোয়া বৈঠকে বসে যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলি দুই দেশের প্রতি সংযম ও শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে কোনো লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে, সংলাপ শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন বেশিরভাগ সদস্য।
ভারতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমস্ত রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছে এবং নির্দেশ দিয়েছে আগামী বুধবার ‘মক ড্রিল’ বা প্রস্তুতিমূলক মহড়া চালাতে। কারণ, পরিস্থিতি ক্রমশ নতুন ও জটিল চেহারা নিচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্র। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলা হয়েছে।
সীমান্তে লাগাতার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জেরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। বহু গ্রামে রাতের বেলা আলো জ্বালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পরিবার নিয়ে স্থানান্তর করছেন। স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ সাধারণ পরিকাঠামোতেও প্রভাব পড়ছে।
সার্বিকভাবে, পাহালগাম হামলার পর থেকে উপত্যকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সীমান্তে ফের যুদ্ধের ছায়া ঘনাচ্ছে। কূটনৈতিক স্তরে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা হলেও ময়দানে সেনা প্রস্তুতি ও উত্তেজনার পারদ ক্রমাগত চড়া হচ্ছে। এখন দেখার, দুই প্রতিবেশী দেশ সংযম দেখিয়ে কূটনীতির পথে সমস্যা সমাধানে আগ্রহ দেখায় কি না।