Supreme Court Judges Assets
নয়াদিল্লি: ভারতের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জনআস্থার পথে বড় পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ এবার প্রকাশ্যে আনতে শুরু করল আদালত কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হতে চলা বিচারপতি বিভি গবাই সহ ২১ জন বিচারপতির সম্পত্তির তথ্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মোট ৩৩ জন বিচারপতি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁদের সম্পত্তির হিসাব প্রকাশ পেয়েছে, তাঁদের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পদের তথ্য এখন সর্বসাধারণের নাগালে। প্রকাশিত বিবরণে বিচারপতিদের বাড়ি, জমি, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ, ফিক্সড ডিপোজিট, বিমা, শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ, সোনা-রুপোর গয়না, গাড়ি এমনকি পারিবারিক সম্পত্তির তথ্যও রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি খান্নার সম্পত্তি
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নামে একটি মারুতি সুইফ্ট গাড়ি রয়েছে। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও স্থায়ী আমানত মিলিয়ে রয়েছে ৫৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৬ লক্ষ ৮৬ হাজার এবং জিপিএফ অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা রয়েছে। দিল্লিতে তাঁর নামে একটি তিন বেডরুম ও একটি চার বেডরুমের ফ্ল্যাটও রয়েছে৷
হবু প্রধান বিচারপতির সম্পত্তি Supreme Court Judges Assets
পরবর্তী প্রধান বিচারপতি বিচারপতি গবাইয়ের পৈতৃক ভিটে রয়েছে মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সেই সম্পত্তি ছাড়াও তাঁর নামে মুম্বইয়ের বান্দ্রা এবং নয়াদিল্লিতে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। অমরাবতী ও নাগপুর মিলিয়ে তিনটি কৃষিজ জমিও রয়েছে তাঁর নামে।
ব্যাঙ্কে তাঁর মোট টাকা রয়েছে ১৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৮৪ টাকা। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ৬ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬৯২ টাকা ও জিপিএফ অ্যাকাউন্টে ৩৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৩৬ টাকা জমা রয়েছে। এছাড়াও কিছু নগদ অর্থ তাঁর হেফাজতে রয়েছে।
স্বচ্ছতার পথে ফের একধাপ
দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনে ‘নগদ কাণ্ড’ সামনে আসার পর থেকেই স্বচ্ছতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হয় সুপ্রিম কোর্ট। চলতি বছরের ১ এপ্রিল ‘ফুল-কোর্ট’ (সকল বিচারপতির উপস্থিতিতে) বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিচারপতিদের সম্পত্তির বিবরণ জনসমক্ষে আনা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একের পর এক বিচারপতির সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত অবশ্য নতুন নয়। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জেএস বর্মার নেতৃত্বে এক ফুল-কোর্ট বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রত্যেক বিচারপতি তাঁদের সম্পত্তির বিবরণ প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দেবেন। তবে তা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক ছিল না।
২০০৯ সালে আরও একটি ফুল-কোর্ট বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিচারপতিরা চাইলে স্বেচ্ছায় তাঁদের সম্পত্তির হিসাব সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারবেন। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা’র কারণ দেখিয়ে আর কেউ তা প্রকাশ্যে আনছিলেন না।
২০১৯ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, বিচারপতিদের সম্পত্তির তথ্য তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য নয় এবং জনস্বার্থে তা জানার অধিকার রয়েছে নাগরিকদের।
বাকি তথ্যের অপেক্ষা
এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ২১ জন বিচারপতির সম্পত্তির হিসাব প্রকাশিত হয়েছে। শীর্ষ আদালতে বর্তমানে দু’জন বাঙালি বিচারপতি রয়েছেন, তবে তাঁদের সম্পত্তির বিবরণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই পদক্ষেপ বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, ন্যায়বিচারের শীর্ষ স্তরেও স্বচ্ছতা বজায় রাখার একটি শক্তিশালী বার্তা দেশের বিচারব্যবস্থায় পাঠানো হল।
Bharat: Indian Supreme Court takes major step towards transparency, publishing asset details of 21 judges including Chief Justice Sanjiv Khanna and future CJI BV Gavai on its website. Details of property, bank accounts, investments, and more are now public.