মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতিতে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অশনি সংকেত

মার্কিন (us) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য, বিশেষ করে বলিউড এবং তেলেগু সিনেমার জন্য, একটি বড় ধাক্কা। এই নীতি,…

us president hikes tariff

মার্কিন (us) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য, বিশেষ করে বলিউড এবং তেলেগু সিনেমার জন্য, একটি বড় ধাক্কা। এই নীতি, যা বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের উপর “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” এবং “প্রচারণার” অভিযোগ তুলে আরোপ করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রসার খরচ দ্বিগুণ করবে।

ভারতীয় সিনেমার উপর প্রভাব

মার্কিন (us) যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি বাজার, বিশেষ করে ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে অ-দেশি দর্শকদের মধ্যেও। ২০২৩ সালে, ভারতীয় ফিল্মগুলি মার্কিন বক্স অফিসে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যেমন “পাঠান”, “জওয়ান”, “আরআরআর” এবং “ডাঙ্কি ” এর মতো ছবিগুলি রেকর্ড ভেঙেছে। তবে, নতুন শুল্ক নীতির ফলে যা হবে

   

বিতরণ খরচ দ্বিগুণ

যদি একটি মার্কিন (us) বিতরক একটি ভারতীয় ফিল্ম প্রদর্শনের জন্য ১ মিলিয়ন ডলারে অধিকার ক্রয় করে, তবে তাদের অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন ডলার শুল্ক হিসেবে দিতে হবে। এটি বিনিয়োগকে দ্বিগুণ করে এবং লাভের সম্ভাবনাকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে।

টিকিটের দাম বৃদ্ধি

বর্ধিত খরচের কারণে টিকিটের দাম বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৩০ ডলারের টিকিটের মধ্যে ১৫ ডলার শুল্ক হিসেবে যেতে পারে, যা দর্শকদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে।

বিতরণে অনিশ্চয়তা

ইতিমধ্যে ক্রয় করা ফিল্মগুলি, যেমন “সালার” বা “কিল”, শুল্কের আকস্মিক আরোপের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

প্রযোজকদের জন্য কৌশল

থিয়েটারে টিকিটের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে তাড়াতাড়ি ডিজিটাল রিলিজের দিকে মনোযোগ দেওয়া—একটি বুদ্ধিমান পদক্ষেপ। এর সুবিধাগুলি হল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে (যেমন নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম) রিলিজ থিয়েটার বিতরণের তুলনায় কম ব্যয়বহুল। এটি শুল্কের প্রভাব এড়াতে সাহায্য করতে পারে, যদিও এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলিও এই শুল্কের আওতায় পড়বে কিনা।

ডিজিটাল রিলিজ ভারতীয় প্রবাসী এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে সক্ষম করে, মার্কিন থিয়েটার বাজারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, “আরআরআর” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৪.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, তবে এর বিশ্বব্যাপী স্ট্রিমিং সাফল্যও উল্লেখযোগ্য। তাড়াতাড়ি ডিজিটাল রিলিজ প্রযোজকদের দ্রুত আয় করতে সক্ষম করে, যা থিয়েটার রিলিজের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার তুলনায় আর্থিক ঝুঁকি কমায়।

তবে, এই কৌশলের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে যেমন ভারতীয় ফিল্মগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিশ্বব্যাপী আয়ের ১৫-২০% উপার্জন করে। তাড়াতাড়ি ডিজিটাল রিলিজ এই রাজস্ব হ্রাস করতে পারে। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে প্রচুর কন্টেন্টের মধ্যে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে, যার জন্য শক্তিশালী বিপণন প্রয়োজন। যদি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলিও শুল্কের আওতায় পড়ে, তবে ডিজিটাল রিলিজের খরচও বাড়তে পারে।

অন্যান্য সম্ভাব্য কৌশল (us)

প্রতিশোধমূলক শুল্কের জন্য চাপ

ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং শিল্প নেতারা, যেমন মুকেশ ভাট এবং বিবেক অগ্নিহোত্রী, প্রতিশোধমূলক শুল্কের পরামর্শ দিয়েছেন। ভাট বলেন, “যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ফিল্মের উপর ১০০% শুল্ক আরোপ করে, আমরাও আমেরিকান ফিল্মের উপর একই শুল্ক আরোপ করব।” এটি হলিউড স্টুডিওগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, যারা ভারতীয় বাজার থেকে উল্লেখযোগ্য আয় করে।

নামেই ‘ফতেহ’! ভারতের মিসাইলের সামনে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ধ্বংস হবে

কূটনৈতিক আলোচনা

অগ্নিহোত্রী ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এই শুল্কের বিরুদ্ধে আলোচনার জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এই শুল্ক থেকে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুটিং

কিছু প্রযোজক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (us) শুটিংয়ের মাধ্যমে শুল্ক এড়ানোর কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে, এটি উচ্চ উৎপাদন খরচ এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে, এবং অনেক নির্মাতা, যেমন ভাট, এটিকে অবাস্তব বলে মনে করেন।

অন্যান্য বাজারে ফোকাস

মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরতা কমাতে প্রযোজকরা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো বিকল্প বাজারগুলিতে মনোযোগ দিতে পারেন।

শিল্পের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ

ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই শুল্কের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিবেক অগ্নিহোত্রী বলেন, “এই শুল্ক ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারে।” তিনি ভারতীয় ফিল্ম নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখর কাপুর বলেন, এই শুল্ক হলিউডকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, কারণ তাদের বক্স অফিসের ৭৫% আয় বিদেশ থেকে আসে।

ট্রাম্পের ১০০% শুল্ক ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য মার্কিন বাজারে একটি বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। তাড়াতাড়ি ডিজিটাল রিলিজ একটি বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে, যা দর্শকদের উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ এড়াতে এবং শুল্কের প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।

তবে, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য প্রতিশোধমূলক শুল্ক, কূটনৈতিক আলোচনা, এবং বিকল্প বাজারের উপর ফোকাস প্রয়োজন। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, যাতে এর বিশ্বব্যাপী প্রভাব অক্ষুণ্ণ থাকে।