মারুতি সুজুকি দ্বিগুণ ইভি উৎপাদনে ঝাঁপাচ্ছে

ভারতের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি (Maruti Suzuki) ইন্ডিয়া তাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে আরও নমনীয় করার পরিকল্পনা করছে, যাতে একই উৎপাদন সেটআপ থেকে অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন…

Maruti Suzuki to Double Production Capacity

ভারতের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি (Maruti Suzuki) ইন্ডিয়া তাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে আরও নমনীয় করার পরিকল্পনা করছে, যাতে একই উৎপাদন সেটআপ থেকে অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন (আইসিই) এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) উভয়ই উৎপাদন করা যায়। কোম্পানির একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, মারুতি সুজুকি ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা আরও ২০ লক্ষ ইউনিট বাড়িয়ে মোট ২৮টি ভিন্ন মডেল বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। বর্তমানে, হরিয়ানা এবং গুজরাটে অবস্থিত তাদের উৎপাদন কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৬ লক্ষ ইউনিট।

বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা

মারুতি সুজুকির হরিয়ানার গুরুগ্রাম এবং মানেসারে অবস্থিত দুটি কারখানা বছরে প্রায় ১৬ লক্ষ ইউনিট গাড়ি উৎপাদন করে। এছাড়া, হরিয়ানার খরখোদায় নতুন একটি কারখানা সম্প্রতি উৎপাদন শুরু করেছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে বছরে ২.৫ লক্ষ ইউনিট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এই কারখানাটি কমপ্যাক্ট এসইউভি ব্রেজার উৎপাদনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যদিকে, গুজরাটে অবস্থিত সুজুকি মোটর গুজরাট ইউনিটে বছরে ৭.৫ লক্ষ ইউনিট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।

   

মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) রাহুল ভারতী একটি বিশ্লেষক কলে বলেন, “আমরা আমাদের কারখানাগুলিকে আরও নমনীয় করছি, যাতে একই উৎপাদন লাইন থেকে একাধিক মডেল তৈরি করা যায়। নতুন উৎপাদন লাইনগুলি এমনভাবে স্থাপন করা হচ্ছে যাতে তারা ইভিও উৎপাদন করতে পারে।” এই নমনীয়তা কোম্পানিকে আইসিই এবং ইভি উভয় ধরনের যানবাহনের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

ইভি উৎপাদনের পরিকল্পনা

মারুতি সুজুকি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘ই ভিটারা’ লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছে। প্রথম বছরে এই ইভির বেশিরভাগ উৎপাদন বিদেশী বাজারে রপ্তানি করা হবে। রাহুল ভারতী জানান, ইভিগুলি ব্যাটারির ওজন এবং শক্তিশালী বডির কারণে ঐতিহ্যবাহী গাড়ির তুলনায় অনেক ভারী। তিনি বলেন, “এই ওজনের কারণে উৎপাদন লাইনে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে, আমরা গুজরাট এবং খরখোদার কারখানাগুলিকে এমনভাবে নমনীয় করে তুলছি যাতে তারা উভয় ধরনের গাড়ি উৎপাদন করতে পারে।”

ইভির লাভজনকতা ও চ্যালেঞ্জ

ইভির লাভজনকতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতী বলেন, ইভির নকশাগত কারণে এর লাভজনকতা আইসিই গাড়ির তুলনায় অনেক কম। তিনি উল্লেখ করেন, “ইভির লাভজনকতা আইসিই গাড়ির সমান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি তা সম্ভব হতো, তাহলে সরকারকে ৫ শতাংশ জিএসটি বা বিভিন্ন প্রণোদনা নীতি প্রবর্তনের প্রয়োজন হতো না।” তবে, তিনি জানান, মারুতি সুজুকি কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য একাধিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করবে। কোম্পানি হাইব্রিড, সিএনজি এবং বায়োফুয়েলের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ইভি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।

রপ্তানি প্রসঙ্গে ভারতী বলেন, “রপ্তানি আমাদের অর্থনৈতিক স্কেল উন্নত করবে এবং কিছু বাজারে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শক্তি প্রদান করতে পারে। তবে, এর ফলাফল সময়ের সঙ্গে দেখা যাবে।” তিনি আরও জানান, কোম্পানি উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অপারেটিং লিভারেজের উপর নজর রাখবে।

কঠোর ক্যাফে-৩ নিয়মের প্রত্যাশা

কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত কঠোর কর্পোরেট অ্যাভারেজ ফুয়েল এফিসিয়েন্সি (ক্যাফে-৩) নিয়মের বিষয়ে ভারতী বলেন, এই নিয়মের চূড়ান্ত রূপ শীঘ্রই প্রকাশিত হতে পারে। তিনি জানান, “শিল্প মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সির সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কাজ করছে, এবং আমরা আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে নীতি প্রকাশের প্রত্যাশা করছি।” এই নিয়ম গাড়ি নির্মাতাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে মারুতি সুজুকি তাদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

মারুতি সুজুকির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মারুতি সুজুকির এই উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং নমনীয় উৎপাদন লাইনের পরিকল্পনা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ। ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে ২৮টি ভিন্ন মডেল বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়ে কোম্পানি তাদের পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনছে। ইভি সেগমেন্টে প্রবেশের মাধ্যমে মারুতি সুজুকি ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে অংশ নিতে চায়, যেখানে টাটা মোটরস এবং মাহিন্দ্রার মতো কোম্পানি ইতিমধ্যেই শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তুলেছে।

এছাড়া, রপ্তানি বাজারে মারুতি সুজুকির ফোকাস তাদের বৈশ্বিক উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করবে। ই ভিটারার মতো মডেলের মাধ্যমে কোম্পানি ইউরোপ এবং এশিয়ার বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। তবে, ইভির উৎপাদন ব্যয় এবং লাভজনকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কোম্পানিকে তাদের মূল্য নির্ধারণ এবং উৎপাদন কৌশল সাবধানে পরিচালনা করতে হবে।

মারুতি সুজুকির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা এবং ইভি উৎপাদনের জন্য নমনীয় উৎপাদন লাইন স্থাপনের উদ্যোগ ভারতের স্বয়ংচালিত শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে ২৮টি মডেল এবং অতিরিক্ত ২০ লক্ষ ইউনিট উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষ্য কোম্পানির বাজারে প্রভাব বাড়াবে। ইভি সেগমেন্টে প্রবেশ এবং কার্বন নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা মারুতি সুজুকিকে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে, ইভির লাভজনকতা এবং কঠোর ক্যাফে-৩ নিয়মের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোম্পানির কৌশলগত পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Advertisements