পহেলগাঁও হামলা নিয়ে তসলিমা নাসরিনের বিতর্কিত মন্তব্য

আবার বিস্ফোরক নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)! সম্প্রতি একটি সাহসী মন্তব্যে বলেছেন, “ইসলাম থাকলে সন্ত্রাসও থাকবে।” ‘লজ্জা’ খ্যাত এই লেখিকা দিল্লি সাহিত্য উৎসবে…

Taslima Nasrin's Bold Statement on Pahalgam Attack

আবার বিস্ফোরক নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)! সম্প্রতি একটি সাহসী মন্তব্যে বলেছেন, “ইসলাম থাকলে সন্ত্রাসও থাকবে।” ‘লজ্জা’ খ্যাত এই লেখিকা দিল্লি সাহিত্য উৎসবে একটি অধিবেশনে এই মন্তব্য করেন। তিনি দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁও ২৬ জনের প্রাণহানির কারণ হওয়া সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে ২০১৬ সালে ঢাকার জঙ্গি হামলার তুলনা টেনেছেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি ইসলামের বর্তমান রূপ এবং এর সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন।

ইসলামের বিবর্তন ও সন্ত্রাসের সম্পর্ক

দিল্লি সাহিত্য উৎসবে বক্তৃতার সময় তসলিমা বলেন, “ইসলাম গত ১,৪০০ বছরে বিবর্তিত হয়নি। যতক্ষণ এটি আধুনিকীকরণ না হবে, ততক্ষণ এটি জঙ্গিদের জন্ম দিতে থাকবে।” তিনি ২০১৬ সালের ঢাকার হোলি আর্টিসান বেকারি হামলার উল্লেখ করে বলেন, “সেই হামলায় মুসলিমরাও নিহত হয়েছিলেন, কারণ তারা কালেমা আবৃত্তি করতে পারেননি। এটাই ঘটে যখন বিশ্বাসকে যুক্তি এবং মানবতার উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়।” ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে ২৯ জনকে হত্যা করেছিল।

   

একইভাবে, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গিরা ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার কিছু প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন যে, হামলাকারীরা লোকজনকে কালেমা আবৃত্তি করতে বলেছিল এবং যারা তা করতে পারেননি, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তসলিমা এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, “ইসলাম থাকলে সন্ত্রাস থাকবে। ইউরোপে গির্জাগুলি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে, কিন্তু মুসলিমরা সর্বত্র মসজিদ তৈরি করতে ব্যস্ত। হাজার হাজার মসজিদ রয়েছে, তবু তারা আরও চায়। এগুলি জিহাদি তৈরি করে। মাদ্রাসা থাকা উচিত নয়। শিশুদের সব বই পড়তে হবে, শুধু একটি নয়।”

মাদ্রাসা বন্ধের আহ্বান

৬২ বছর বয়সী এই লেখিকা মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, মাদ্রাসাগুলি ধর্মীয় উগ্রবাদের জন্ম দেয় এবং শিশুদের শিক্ষাকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে। তাঁর মতে, শিশুদের বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত, যাতে তারা যুক্তিবাদী এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারে।

নির্বাসন ও ভারতের প্রতি ভালোবাসা

১৯৯৪ সালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়। তারপর থেকে তিনি সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মতো দেশে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, “আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছর বসবাস করেছি এবং সেখানে আমি স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু আমি সবসময় নিজেকে বহিরাগত মনে করেছি। কলকাতায় এসে আমি প্রথমবারের মতো ঘরের অনুভূতি পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরেও দিল্লিতে আমি আরেকটি ঘর খুঁজে পেয়েছি। এই দেশ আমাকে সেই অন্তর্গত বোধ দিয়েছে, যা আমার নিজের দেশ আমাকে দিতে পারেনি।” তিনি আরও বলেন, “আমি ভারতকে ভালোবাসি। এটি আমার ঘরের মতো।”

বাংলাদেশে নারীদের অবস্থা ও ইউনিফর্ম সিভিল কোড

তসলিমা নাসরিন তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশে নারীদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নারীদের কোনো মৌলিক অধিকার নেই।” তিনি ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি)-এর পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “প্রতিটি সভ্য দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড থাকা উচিত। ভারতেও এটি প্রয়োজন। আমি এটিকে সমর্থন করি। ইসলামিক পিতৃতন্ত্র কুরআনের অধিকার চায়। অধিকার কখনো ধর্মীয় হওয়া উচিত নয়। যদি সংস্কৃতি, ধর্ম বা ঐতিহ্যের নামে নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তবে আমাদের সেই সংস্কৃতিকে প্রশ্ন করতে হবে। যে সমাজ তার অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে পারে না, সে সমাজ ব্যর্থ।”

পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তসলিমা নাসরিন এই হামলাকে ধর্মীয় উগ্রবাদের ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এর জন্য ইসলামের রক্ষণশীল ব্যাখ্যাকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, যতক্ষণ ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে বিভক্ত করবে এবং উগ্রবাদকে উৎসাহিত করবে, ততক্ষণ এই ধরনের হামলা অব্যাহত থাকবে।

তসলিমার বিতর্কিত অবস্থান

তসলিমা নাসরিনের এই মন্তব্যগুলি অতীতেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাঁর বই ‘লজ্জা’, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন, তা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাঁর স্পষ্টবাদী মন্তব্য এবং ধর্মীয় সংস্কারের আহ্বান তাঁকে অনেকের কাছে একজন সাহসী লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তবে কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলির কাছে তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব।

তসলিমা নাসরিনের পহেলগাঁও হামলা নিয়ে মন্তব্য ধর্ম, সন্ত্রাস এবং সমাজের আধুনিকীকরণ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। তিনি ইউনিফর্ম সিভিল কোড, মাদ্রাসা শিক্ষার বিলোপ এবং নারী অধিকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর মতে, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং পশ্চাৎপদ শিক্ষা ব্যবস্থা সন্ত্রাসের মূল কারণ। ভারতকে তিনি তাঁর ঘর হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এই দেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই বক্তব্যগুলি সমাজে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে, তবে এটি ধর্মীয় সংস্কার এবং মানবাধিকার নিয়ে আলোচনাকে আরও তীব্র করবে।