ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব (East Bengal FC) বর্তমানে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ২০২৪-২৫ মরসুমে দলটির পারফরম্যান্স নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দলের ফলাফল তেমন সন্তোষজনক নয়, এবং টিম ম্যানেজমেন্ট এখন দলকে পুনর্গঠনের জন্য তৎপর। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবটি বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং নতুন খেলোয়াড়দের দলে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে ক্লেইটন সিলভাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, সল ক্রেসপো, মেসি বাউলি, হেক্টর ইউস্তে এবং রিচার্ড সেলিসের মতো বিদেশি খেলোয়াড়দেরও দল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে একটি নাম সামনে এসেছে, যা সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে – তিনি হলেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফিগুইরা ডামাসেনো।
মিগুয়েল ফিগুইরা: ইস্টবেঙ্গলের নতুন আশা
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইস্টবেঙ্গল বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের ২৫ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফিগুইরা ডামাসেনোর সঙ্গে দলবদলের আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মিগুয়েলের সঙ্গে এক বছরের চুক্তির জন্য আলোচনা চলছে, যা মেডিকেল পরীক্ষার সফল সমাপ্তির উপর নির্ভর করছে। এই ট্রান্সফারটি সম্পন্ন হলে মিগুয়েল হবেন ইস্টবেঙ্গলের এই মরসুমের প্রথম বিদেশি সাইনিং। ক্লাবের প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজনের পরামর্শে মিগুয়েলকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি আগে বসুন্ধরা কিংসে ব্রুজনের অধীনে কাজ করেছেন। এই পরিচিতি মিগুয়েলকে দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মিগুয়েলের দক্ষতা ও সম্ভাবনা
মিগুয়েল ফিগুইরা একজন বহুমুখী মিডফিল্ডার, যিনি আক্রমণাত্মক এবং রক্ষণাত্মক উভয় ভূমিকায় দক্ষ। তিনি মাঠের কেন্দ্রীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। ইস্টবেঙ্গল এমন একজন নাম্বার ৮ খেলোয়াড়ের সন্ধানে ছিল, যিনি মাঝমাঠে স্থিতিশীলতা এবং সৃজনশীলতা আনতে পারেন। মিগুয়েলের খেলার ধরন এই প্রয়োজনের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি, পাসিং নির্ভুলতা এবং গোলের সুযোগ তৈরি করার ক্ষমতার জন্য প্রশংসিত। বসুন্ধরা কিংসে তার পারফরম্যান্স তাকে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে একটি উঠতি তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
দলের পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপট
ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান অবস্থা সমর্থকদের জন্য হতাশাজনক। ১৩টি ম্যাচে মাত্র দুটি জয় নিয়ে দলটি পয়েন্ট তালিকায় ১১তম স্থানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবের মালিক কোম্পানি এমামি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোচ অস্কার ব্রুজনকে নতুন খেলোয়াড় নিয়োগের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তিনি ছয়জন নতুন বিদেশি খেলোয়াড়ের তালিকা তৈরি করেছেন, যার মধ্যে মিগুয়েল অন্যতম। বর্তমান বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্লেইটন সিলভা ইতিমধ্যেই দল ছেড়েছেন, এবং ক্রেসপো, বাউলি, ইউস্তে এবং সেলিসের মতো খেলোয়াড়দেরও ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
অন্যান্য সম্ভাব্য সাইনিং
মিগুয়েল ছাড়াও ইস্টবেঙ্গল আরও কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলোচনা করছে। সূত্রের খবর, ভারতীয় ফুটবলার বিপিন সিং দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। এছাড়া, বসুন্ধরা কিংসের আরেকজন বিদেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। এই ট্রান্সফারগুলো সম্পন্ন হলে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ এবং আক্রমণাত্মক বিভাগে নতুন শক্তি সঞ্চার হবে।
সমর্থকদের প্রত্যাশা
ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে দলের সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। ২০২৪ সালে কলিঙ্গ সুপার কাপ জয়ের পর সমর্থকরা আশা করেছিলেন যে দলটি আইএসএলে ভালো পারফর্ম করবে। কিন্তু বর্তমান মরসুমে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। মিগুয়েল ফিগুইরার মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সম্ভাব্য আগমন সমর্থকদের মধ্যে নতুন উৎসাহ জাগিয়েছে। তারা আশা করছেন যে এই নতুন সাইনিং দলের ভাগ্য বদলে দেবে।
ইস্টবেঙ্গলের জন্য এই ট্রান্সফার উইন্ডোটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিগুয়েল ফিগুইরার মতো খেলোয়াড়দের দলে নিয়ে আসার মাধ্যমে ক্লাবটি তাদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কোচ অস্কার ব্রুজনের কৌশল এবং নতুন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। সমর্থকরা এখন মুখিয়ে আছেন মিগুয়েলের মাঠে নামার জন্য এবং লাল-হলুদ জার্সিতে তার জাদু দেখার জন্য। আগামী দিনগুলো ইস্টবেঙ্গলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।