জম্মু ও কাশ্মীরের (jammu-kashmir) রামবান জেলায় রবিবার একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি প্রায় ৭০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যাওয়ায় তিন জওয়ান নিহত হয়েছেন। নিহত জওয়ানদের নাম সেপয় অমিত কুমার, সুজিত কুমার এবং মান বাহাদুর বলে জানা গেছে।
এই ঘটনাটি ঘটেছে জাতীয় সড়ক ৪৪ এ সকাল ১১:৩০ নাগাদ। গাড়িটি জম্মু থেকে শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। এই দুর্ঘটনা পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে সেনাবাহিনীর জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ের অংশ হিসেবে গাড়িটি জম্মু থেকে (jammu-kashmir) শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। কর্মকর্তাদের মতে, চালক সম্ভবত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, ফলে গাড়িটি সড়ক থেকে ছিটকে পড়ে খাদে গড়িয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়, এবং জওয়ানদের দেহ, তাদের জিনিসপত্র এবং কিছু কাগজপত্র দুর্ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে জওয়ানদের দেহ উদ্ধার করা একটি জটিল কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
উদ্ধার অভিযান (jammu-kashmir)
দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ভারতীয় সেনাবাহিনী, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। উদ্ধারকারী দলগুলো খাদের গভীরে নেমে জওয়ানদের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালায়।
উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে , এবং স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী এই কাজে সমন্বয় করে কাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই এলাকার রাস্তা খাড়া এবং বিপজ্জনক, যা প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে।
পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট
এই দুর্ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন জম্মু ও কাশ্মীরে (jammu-kashmir) নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। গত ২২ এপ্রিল পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা পহেলগাঁও র বাইসারান উপত্যকায় পর্যটকদের উপর হামলা চালায়, যাতে ২৬ জন নিহত হন। এই হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার অভিযোগ তুলেছে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের রাশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন, এবং পাকিস্তানের মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে।
ভারতের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, পাকিস্তানের ‘মৃত্যুর সরঞ্জাম’ পাঠালেন পুতিন
ভারতের প্রতিক্রিয়া
পহেলগাঁও (jammu-kashmir) হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দিয়েছেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের মাত্রা কমিয়েছে, ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং পাকিস্তানি এয়ারলাইন্সের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
এছাড়াও, ভারত পাকিস্তান থেকে সমস্ত আমদানি ও ট্রানজিট পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় ফ্লাইটের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
সেনাবাহিনীর জন্য ধাক্কা
রামবানের এই দুর্ঘটনা সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় ক্ষতি। জম্মু ও কাশ্মীরে (jammu-kashmir) সেনাবাহিনী কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করে, যেখানে সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয়। এই ধরনের দুর্ঘটনা সেনাবাহিনীর মনোবলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তবে সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে যে তারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে একসঙ্গে কাজ করছে। নিহত জওয়ানদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে এবং তাদের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পহেলগাঁও (jammu-kashmir) হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে চীন, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে, একটি “নিরপেক্ষ তদন্ত” এর আহ্বান জানিয়েছে, যা ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়া ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রামবানে সেনার গাড়ি খাদে পড়ে তিন জওয়ানের মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা, যা জম্মু ও কাশ্মীরের সংবেদনশীল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা এবং সীমান্তে অব্যাহত অশান্তির মধ্যে এই দুর্ঘটনা সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করছে, তবে এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরের রাস্তার নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনীর জন্য ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের বিষয়টিকে পুনরায় সামনে এনেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন উভয় দেশকে শান্তি ও সংলাপের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।