গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং রবিবার প্রধানমন্ত্রী (pm) নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সূত্রের খবর, বায়ুসেনা প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে, শনিবার নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আরব সাগরের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন।
পহেলগাঁও হামলা ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
গত ২২ এপ্রিল পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিরা জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান উপত্যকায় পর্যটকদের উপর হামলা চালায়। এই উপত্যকায় শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছানো যায়। হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন।
জঙ্গিরা অমুসলিম পর্যটকদের আলাদা করে ইসলামিক বিশ্বাসের ঘোষণা কালিমা পড়তে বলে এবং অস্বীকার করায় তাদের কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের রাশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রসহ “সম্পূর্ণ শক্তির পরিসর” ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ফাঁস হওয়া কিছু নথি থেকে জানা গেছে যে ভারত পাকিস্তানের নির্দিষ্ট এলাকায় হামলার পরিকল্পনা করছে।
এছাড়াও, পাকিস্তানের মন্ত্রী (pm) আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, তাদের কাছে “বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য” রয়েছে যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক প্রস্তুতি এবং কৌশলগত পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানকে VT 4 পাঠাচ্ছে এই ‘বন্ধু’ দেশ, পারবে ভারতের ‘অর্জুন’ এবং ‘ভীষ্ম’-কে টেক্কা দিতে?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সামরিক প্রধানদের বৈঠক (pm)
বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর (pm) বৈঠক এই সংকটের মধ্যে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি সরকারের উচ্চ মাত্রার মনোযোগের ইঙ্গিত দেয়। যদিও বৈঠকের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি এদবং তা অত্যন্ত গোপনীয় , ধারণা করা হচ্ছে যে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হুমকি এবং পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারতের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বায়ুসেনা প্রধান সম্ভবত ভারতীয় বায়ুসেনার প্রস্তুতি, নজরদারি এবং সম্ভাব্য অপারেশনাল পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন।
এর আগে শনিবার নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠী প্রধানমন্ত্রীর (pm) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আরব সাগরের সমুদ্রপথে ভারতীয় নৌবাহিনীর কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন।
আরব সাগর ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভারতের তেল আমদানি এবং বাণিজ্যিক সমুদ্রপথের একটি প্রধান রুট। পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে এই অঞ্চলে নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ
পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী (pm) নরেন্দ্র মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের মাত্রা কমিয়েছে এবং একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ভিসা বাতিল করা, পাকিস্তানি এয়ারলাইন্সের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা বন্ধ করা এবং আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বন্ধ করা।
এছাড়াও, ভারত পাকিস্তান থেকে সমস্ত আমদানি ও ট্রানজিট পণ্যের উপর তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পাকিস্তান এই পদক্ষেপের জবাবে শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় ফ্লাইটের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারতের সামরিক হামলা “আসন্ন”, তবে তারা কেবল “অস্তিত্বের উপর সরাসরি হুমকি” হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
পহেলগাঁও হামলা ভারতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলতে উৎসাহিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জাপান হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। তবে চীন, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে, একটি “নিরপেক্ষ তদন্ত” এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ভারতের সামরিক প্রস্তুতি
ভারতীয় বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনী বর্তমানে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। বায়ুসেনা পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও ড্রোন মোতায়েন করেছে। নৌবাহিনী আরব সাগরে টহল জোরদার করেছে এবং ভারতের সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। সেনাবাহিনীও জম্মু ও কাশ্মীরে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে। বায়ুসেনা প্রধান এবং নৌবাহিনী প্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠক ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সামরিক প্রস্তুতির উপর সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নির্দেশ করে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকি এবং ভারতের কঠোর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন উভয় দেশকে সংযম এবং সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে ভারত ও পাকিস্তান কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে, তা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।