বাজার বন্ধ করে ২০২৩ এর দুঃস্বপ্ন স্মরণ মণিপুরে

২০২৩ সালের হিংসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মণিপুরে (manipur) আজ বাজার বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাসিন্দারা নীরবতা ও প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন…

manipur maarket closed on sunday

২০২৩ সালের হিংসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মণিপুরে (manipur) আজ বাজার বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাসিন্দারা নীরবতা ও প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করেছেন, যদিও রাজ্যে উত্তেজনা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় একজন স্থানীয় বাসিন্দা সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এখানকার পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে; এখন শান্তি রয়েছে। সরকারের উচিত একটি স্থায়ী সমাধান আনা।” আরেকজন ইম্ফলবাসী বলেন, “শান্তি থাকলে এখানে উন্নয়ন হবে।”

   

রাষ্ট্রপতির শাসন চলছে

মণিপুরে (manipur) গত ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিংয়ের পদত্যাগের পর থেকে রাষ্ট্রপতির শাসন চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারি সংবিধানের ৩৫৬ ধারার অধীনে মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়, যা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের পাঁচ দিন পর কার্যকর হয়।

২০২৩ সালের ৩ মে মণিপুরে হিংসার ঘটনা

২০২৩ সালের ৩ মে মণিপুরে হিংসার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে, যখন মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি (এসটি) তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবির বিরুদ্ধে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এটিএসইউ) আয়োজিত একটি সমাবেশে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সহিংসতা পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়।

জাতিগত সহিংসতার দ্বিতীয় বার্ষিকী

এদিকে, মণিপুরের (manipur) জাতিগত সহিংসতার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে কম ট্রাইবস অর্গানাইজেশন – ভ্যালি (কেটিও-ভি) সভাপতি হাওপু কম শনিবার জোর দিয়ে বলেন, রাজ্যের চলমান পরিস্থিতির সমাধানের জন্য মণিপুরের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি। তিনি মণিপুরের ২৬টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানান, যা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ।

হাওপু কম বলেন

এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় হাওপু কম বলেন, “আমাদের জন্য ঐক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ না আমরা একত্রিত হচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের ভূমি রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কিছু মানুষ মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াই সমাধান নিয়ে আসবে।” তিনি আরও বলেন, মণিপুরে বসবাসকারী ২৬টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐক্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

প্রথমার্ধ শেষে বোরহা হেরেরার গোলে এগিয়ে এফসি গোয়া

সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব (manipur)

মণিপুরের (manipur) সহিংসতা ২০২৩ সাল থেকে রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই সংঘাতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সহিংসতার ফলে রাজ্যের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। ইম্ফলের বাজার বন্ধ এবং নীরব প্রতিফলন এই সংকটের গভীরতা এবং স্থানীয়দের শান্তির প্রত্যাশাকে প্রকাশ করে।

রাষ্ট্রপতির শাসন জারির পর মণিপুরে (manipur) প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে, জাতিগত উত্তেজনা এবং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে অবিশ্বাস এখনও শান্তি প্রক্রিয়ার পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের প্রশাসনের উপর স্থায়ী সমাধানের জন্য চাপ বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সংগঠনগুলো বারবার সংলাপ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। হাওপু কমের বক্তব্য মণিপুরের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। তিনি বলেন, “আমাদের ভূমি এবং

সংস্কৃতি রক্ষার জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যায় না।” তাঁর এই আহ্বান রাজ্যের জাতিগত বিভেদ অতিক্রম করে একটি সুসংহত সমাজ গঠনের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। মণিপুরের পরিস্থিতি এখনও সংবেদনশীল রয়েছে, এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রয়োজন।

স্থানীয়দের মতে, শান্তি ছাড়া রাজ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপ, পুনর্বাসন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ইম্ফলের নীরবতা

ইম্ফলের নীরবতা এবং বাজার বন্ধ মণিপুরের (manipur) মানুষের বেদনা এবং শান্তির জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। হাওপু কমের মতো নেতারা যে ঐক্যের কথা বলছেন, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে মণিপুরে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হতে পারে। তবে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে অবিশ্বাস দূর করা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

মণিপুরের জনগণ এখন শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য অপেক্ষা করছে। স্থানীয় নেতা এবং সংগঠনগুলোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা এই সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মণিপুরের দ্বিতীয় বার্ষিকী শুধু অতীতের স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য শান্তির প্রত্যাশার একটি প্রতিফলন।