তদন্তে আর ও এক ধাপ এগিয়ে রানার কণ্ঠস্বর- হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ এনআইএর

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) শনিবার ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত তাহাউর রানার (rana) কণ্ঠস্বর এবং হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করেছে। সম্প্রতি…

rana has given hand writting and voice to nia

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) শনিবার ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত তাহাউর রানার (rana) কণ্ঠস্বর এবং হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা রানাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফার্স্ট ক্লাস বৈভব কুমারের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি বিভিন্ন বর্ণমালা এবং সংখ্যাসূচক অক্ষর লিখে হাতের লেখার নমুনা দিয়েছেন।

আইনজীবী পীযূষ সচদেব জানিয়েছেন

রানার (rana) আইনি সহায়তা প্রদানকারী আইনজীবী পীযূষ সচদেব জানিয়েছেন, রানা আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন এবং তাঁর কণ্ঠস্বর ও হাতের লেখার নমুনা জমা দিয়েছেন। বিশেষ এনআইএ আদালত সম্প্রতি তাহাউর রানার কণ্ঠ ও হস্তলিখনের নমুনা সংগ্রহের জন্য জাতীয় তদন্ত সংস্থার আবেদন অনুমোদন করেছে। বিশেষ এনআইএ বিচারক চন্দর জিৎ সিং গত বুধবার এই অনুমোদন দেন।

   

তাহাউর রানার এনআইএ হেফাজতের মেয়াদ (rana)

এর আগে, গত সোমবার একই আদালত তাহাউর রানার (rana) এনআইএ হেফাজতের মেয়াদ আরও ১২ দিনের জন্য বাড়িয়েছে। শুনানির সময় এনআইএ আদালতকে জানায়, রানাকে ২৬/১১ মুম্বাই হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিপুল পরিমাণ নথি এবং প্রমাণের সামনে হাজির করা হয়েছে। সংস্থাটি যুক্তি দিয়ে বলে, তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণ করতে আরও হেফাজতের প্রয়োজন।

শক্তি বৃদ্ধি হবে ভারতীয় সেনার, শীঘ্রই পাবে নতুন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম

এনআইএ দাবি করে

এনআইএ দাবি করে, রানা (rana) জিজ্ঞাসাবাদের সময় অসহযোগিতামূলক আচরণ করেছেন এবং প্রশ্নের উত্তরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর অভিযোগিত জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের জন্য আরও হেফাজত জরুরি বলে এনআইএ জানায়।

আইনি প্রক্রিয়ায় এনআইএ-র পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট দয়ান কৃষ্ণন এবং বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নরেন্দ্র মান। অন্যদিকে, লিগ্যাল সার্ভিসেসের আইনজীবী পীযূষ সচদেব রানার পক্ষে সাফাই দেন। রানার আইনজীবী হেফাজতের মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করে বলেন, অতিরিক্ত হেফাজত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অপ্রয়োজনীয়।

৬৪ বছর বয়সী তাহাউর রানা, (rana) যিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ব্যবসায়ী, এই মাসের শুরুতে ২০০৮ সালের মুম্বাই জঙ্গি হামলায় তাঁর কথিত ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। প্রত্যর্পণের পর তাঁকে নয়াদিল্লিতে এনআইএ-র হেফাজতে রাখা হয়েছে, যেখানে তদন্তকারীরা হামলার সঙ্গে তাঁর সন্দেহজনক সংযোগের বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।

২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হামলা, যা পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তইবা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, ১৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়। রানার প্রত্যর্পণ এবং তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ ভারতের এই হামলার সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনার চলমান প্রচেষ্টার অংশ।

তাহাউর রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ

তাহাউর রানার (rana) বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মুম্বাই হামলার পরিকল্পনা ও সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি কথিতভাবে হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। হেডলি, যিনি লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, মুম্বাইয়ের টার্গেটগুলোর উপর নজরদারি করেছিলেন এবং হামলার পরিকল্পনায় সহায়তা করেছিলেন। রানার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হেডলির ভ্রমণ এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কণ্ঠস্বর এবং হস্তলিখনের নমুনা সংগ্রহ

এনআইএ-র তদন্তে রানার (rana) কণ্ঠস্বর এবং হস্তলিখনের নমুনা সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো হামলার সময় ব্যবহৃত যোগাযোগ এবং নথির সঙ্গে তাঁর সংযোগ প্রমাণ করতে সহায়ক হবে। তদন্তকারীরা রানার বিরুদ্ধে আরও ডিজিটাল এবং ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ করছে, যা তাঁর অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে।

রানার (rana) প্রত্যর্পণ ভারতের কূটনৈতিক এবং আইনি প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন ভারত সরকার বারবার তাঁর প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছিল। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাঁর প্রত্যর্পণের অনুমোদন দেয়, যা ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মুম্বই হামলার ঘটনা

মুম্বই হামলার ঘটনা ভারতের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলা এই হামলায় মুম্বইয়ের তাজমহল প্যালেস হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস এবং অন্যান্য স্থান লক্ষ্যবস্তু হয়। হামলাকারীরা সমুদ্রপথে এসে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং বিস্ফোরণ ঘটায়, যা দেশব্যাপী শোক ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।

রানার (rana) হেফাজত এবং তদন্ত ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে “শূন্য সহনশীলতা” নীতির প্রতিফলন। এনআইএ-র তদন্তে নতুন তথ্য উঠে আসতে পারে, যা হামলার অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে। এই প্রক্রিয়া ভারতের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।

তাহাউর রানার বিচার প্রক্রিয়া এবং তদন্তের অগ্রগতি ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি কেবল ২৬/১১ হামলার শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে না, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা রোধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।