‘আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রস্তুত’ বলে পাকিস্তানকে নিশানা সংখ্যালঘু মন্ত্রীর

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এই পটভূমিতে কর্ণাটকের গৃহনির্মাণ,…

minority minister wants to attack pakistan

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এই পটভূমিতে কর্ণাটকের গৃহনির্মাণ, ওয়াকফ ও সংখ্যালঘু (minority minister) বিষয়ক মন্ত্রী বিজেড জমির আহমেদ খান এক উস্কানিমূলক মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায়, তবে তিনি “সুইসাইড বোমা পরে” পাকিস্তানে গিয়ে লড়তে প্রস্তুত।

জমির আহমেদ খান বলেন

জমির আহমেদ খান (minority minister) কন্নড় ও ইংরেজি মিশিয়ে বলেন, “আমরা ভারতীয়, আমরা হিন্দুস্তানি। আমাদের আর পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। যদি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, আমি লড়তে প্রস্তুত।” তিনি আরও বলেন, “মন্ত্রী হিসেবে আমাকে যদি পাঠানো হয়, আমি সম্মুখ সমরে যাব। প্রয়োজনে আমি সুইসাইড বোমা পরব।

   

আমি মজা করছি না বা আবেগের বশে কথা বলছি না (minority minister)। দেশের প্রয়োজন হলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাকে একটি সুইসাইড বোমা দিন, আমি তা পরে পাকিস্তানে যাব।” তিনি মুষ্টি বন্ধ করে এই কথাগুলো বলেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সিদ্দারামাইয়ার যুদ্ধ বিরোধিতা (minority minister)

এই মন্তব্যের কয়েক দিন আগে তাঁর দলীয় সহকর্মী এবং কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের বিরোধিতা করে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েন। পহেলগাঁও হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিদ্দারামাইয়া বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো প্রয়োজন নেই। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই। শান্তি থাকা উচিত, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

পরে তিনি স্পষ্টীকরণ দিয়ে বলেন, “যুদ্ধ সবসময় একটি দেশের শেষ অবলম্বন হওয়া উচিত। শত্রুকে পরাজিত করার সব উপায় ব্যর্থ হলে তবেই যুদ্ধে যাওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে ইন্দুস জল চুক্তি পুনর্বিবেচনা একটি স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ। আমরা বিশ্বাস করি, আরও কঠোর পদক্ষেপ আসছে।

প্রতিটি পদক্ষেপ প্রকাশ্যে ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই (minority minister)। নিশ্চিত থাকুন, দেশ প্রতিটি কঠোর ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের পেছনে ঐক্যবদ্ধ।” তিনি আরও বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এই অভূতপূর্ব বৈশ্বিক সমর্থন কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা আর কখনো এমন বেপরোয়া কাজ না করে।”

সিদ্দারামাইয়ার এই মন্তব্য পাকিস্তানি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় বিজেপি কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানায়। বিজেপি দাবি করে, সিদ্দারামাইয়ার মন্তব্য ভারতের শক্তিশালী অবস্থানকে দুর্বল করে।

বদলে গেল সকালের প্রথম মেট্রো পরিষেবার সময়, বাড়ছে সংখ্যাও, কোন রুটে জানুন

পহেলগাঁও হামলার পর

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে “সীমান্তের ওপারের সংযোগ” উল্লেখ করে একাধিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত করা, আটারি-ওয়াঘা স্থল সীমান্ত বন্ধ করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মাত্রা হ্রাস। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কি বাত’ ভাষণে বলেন, “পহেলগাঁও হামলার অপরাধী এবং ষড়যন্ত্রকারীদের সবচেয়ে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “১৪০ কোটি ভারতীয়দের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা বিশ্ব আমাদের পাশে রয়েছে। আমি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আশ্বাস দিচ্ছি, তারা ন্যায়বিচার পাবে, এবং ন্যায়বিচার করা হবে।”

জমির আহমেদ খানের মন্তব্য

জমির আহমেদ খানের (minority minister) মন্তব্য তাঁর দলের মুখ্যমন্ত্রীর সতর্ক অবস্থানের বিপরীতে তীব্র যুদ্ধোন্মাদী বক্তব্য হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যকে প্রকাশ করে। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সবসময় ভারতের শত্রু ছিল। আমি দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।” তবে তাঁর এই বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিবর্তে সহিংসতার প্রচার হিসেবে দেখা যেতে পারে।

এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমে জমিরের মন্তব্য ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, এবং সামাজিক মাধ্যমে এটি ভাইরাল হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এই মন্তব্যের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

পহেলগাঁও হামলার দায়

পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তইবার একটি শাখা বলে মনে করা হয়। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে কর্ণাটক, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালার বাসিন্দা এবং একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, হামলায় চারজন জঙ্গি জড়িত ছিল, যার মধ্যে দুজন পাকিস্তানি এবং দুজন ভারত-শাসিত কাশ্মীরের।

এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জমির আহমেদ খানের মন্তব্য কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সিদ্দারামাইয়ার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান এবং জমিরের যুদ্ধোন্মাদী বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতাকেও প্রকাশ করে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। পহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কঠোর অবস্থান এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন এই সংকটের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।